ঢাকাশুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কাপ্তাই হ্রদে পানি সংকট চরমে: বিপর্যস্ত জীবন ও অর্থনীতি

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ২২, ২০২৫ ২:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় স্থানীয় জনজীবন ও অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। ষাটের দশকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্মিত এই কৃত্রিম জলাধারটি সময়ের সাথে সাথে পাহাড়ি অঞ্চলের পরিবহন, কৃষি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে।

তবে চলমান খরার প্রকোপ ও বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে হ্রদের পানি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে বড় নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে কৃষিপণ্য পরিবহন ও যাত্রী পরিবহনের উপর। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে ছোট বোটে যাতায়াত করছেন, যা অধিক খরচসাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় বোট কাদায় আটকে পড়ে, যাত্রী ও চালকরা ঠেলে ঠেলে তা এগিয়ে নিচ্ছেন—ফলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

এই সমস্যার অর্থনৈতিক প্রভাবও মারাত্মক। হ্রদের পানির অভাবে কৃষিপণ্য ও মৌসুমি ফলের সরবরাহ কমে গেছে, শ্রমজীবী মানুষের কাজ কমে গেছে এবং বাজারে পণ্যের জোগান ঘাটতি দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের মতে, হ্রদের গভীরতা অনেকাংশে কমে যাওয়ার জন্য পলি জমাই দায়ী। বহুবার অভিযোগ করা হলেও কার্যকর ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ দেখা যায়নি।

বিদ্যুৎ খাতেও দেখা দিয়েছে বড় সংকট। দেশের একমাত্র পানি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই হ্রদ বর্তমানে মাত্র একটি ইউনিট চালু রাখতে পারছে, যেখানে উৎপাদন মাত্র ৩৫-৪০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। অথচ পানি পর্যাপ্ত থাকলে এই কেন্দ্র প্রতিদিন ২২০-২৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।

এছাড়াও, এই সংকট চট্টগ্রাম শহরের পানির জোগান ব্যবস্থাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, হ্রদ থেকে প্রবাহিত পানি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার মাধ্যমে শোধন করে সরবরাহ করা হয়। পানি কমে গেলে নদীতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে, যা পানি শোধনের মানকে হুমকির মুখে ফেলে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদে পানি নিয়ন্ত্রণ এখন একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। পানি কমে গেলে একাধিক উপজেলা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, আবার পানি বেশি থাকলে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য ড্রেজিংকে একমাত্র টেকসই সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর ৭৬.৭৯ এমএসএল (মিন সি লেভেল), যেখানে থাকার কথা ৯২.৯০ এমএসএল। অর্থাৎ ১৬.১১ মিটার ঘাটতি তৈরি হয়েছে—যা শুধু উদ্বেগজনক নয়, বরং এটি জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্যও এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।