ঢাকাসোমবার, ১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এবার চট্টগ্রামে সুন্দর গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, সবাই চায় ‘রেড চিটাগাং’

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ১৯, ২০২৫ ১:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর বাজার। গোয়ালঘর থেকে শুরু করে খামার, স্থানীয় পশুর হাট থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—সবখানেই পশু বিক্রির প্রস্তুতি ও বেচাকেনা বাড়ছে।

চট্টগ্রামের মানুষ সাধারণত মাঝারি আকৃতির দেশি গরু কিনতেই বেশি আগ্রহী। স্থানীয়ভাবে ‘রেড চিটাগাং’ নামে পরিচিত লাল গরুর বিশেষ কদর রয়েছে। অনেকে আবার নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান বা ব্রাহামা জাতের গরুর প্রতি আগ্রহ দেখান। গরুর পাশাপাশি ছাগল, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা এবং গয়ালের মতো পশুও কোরবানির জন্য বিক্রি হয় এখানে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছর চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা ও নগরের তিনটি থানায় কোরবানির পশুর মোট চাহিদা প্রায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। এর বিপরীতে প্রস্তুত পশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। ফলে আনুমানিক ৩৫ হাজার ৩৮৭টি পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে এই ঘাটতি নিয়ে তেমন উদ্বেগ নেই প্রশাসনের, কারণ প্রতিবছরের মতো এবারও খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ফেনীসহ আশপাশের জেলা থেকে প্রচুর গরু চট্টগ্রামে আসে। উত্তরবঙ্গ থেকেও ট্রাকযোগে পশু পাঠানো হয়। ফলে স্থানীয়ভাবে চাহিদা মেটানো সম্ভব না হলেও বাহ্যিক উৎস থেকে সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় গৃহস্থ পর্যায়ে গবাদিপশু লালন-পালনের হার বেড়েছে। ফলে স্থানীয়ভাবে পশু উৎপাদনও বেড়েছে। এবার চট্টগ্রামে কোরবানির যে চাহিদা রয়েছে, তা অভ্যন্তরীণ প্রাপ্যতা থেকেই পূরণ সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কোরবানির জন্য চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে তিন লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি ষাঁড়, এক লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি বলদ, ৪৯ হাজার ১১৪টি গাভি এবং ৬৪ হাজার ১৬৩টি মহিষ। পাশাপাশি রয়েছে দুই লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি ছাগল ও ৫৫ হাজার ৬৯৭টি ভেড়া। অন্যান্য পশুর সংখ্যা ৩৫টি। উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি পশুর চাহিদা সন্দ্বীপ উপজেলায়, যেখানে চাহিদা ও প্রাপ্যতা সমান—৮৫ হাজার ২৫০টি। সবচেয়ে কম চাহিদা বোয়ালখালী উপজেলায়—২৯ হাজার ৭৪২টি। চট্টগ্রাম নগরীতে পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭টি।

চট্টগ্রামে পশু কেনার ক্ষেত্রে একটি আলাদা প্রবণতা দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষ কোরবানির ঠিক আগের দিন পশু কিনে থাকেন। এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ—বাড়িতে পশু রাখার স্থান সঙ্কট, খাবার খাওয়ানোর অসুবিধা, অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি ইত্যাদি। আবার অনেক পরিবার কোরবানির পশু কিনে দেন নববিবাহিত কন্যার শ্বশুরবাড়ির জন্য কিংবা শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে। সবমিলিয়ে দেশের অন্যতম বড় পশুর বাজার হিসেবে চট্টগ্রামের কোরবানির বাজার বেশ বৈচিত্র্যময়।

চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর ইতিহাসও সমৃদ্ধ। ২০১১ সালে জেলায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৭টি পশু কোরবানি হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়ে। ২০২৪ সালে জেলার পাশাপাশি নগর মিলিয়ে কোরবানি হয় ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু।

এত সব আয়োজন ও প্রস্তুতির মধ্যেও একটি বিষয় পরিষ্কার—চট্টগ্রামে পশুর সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং কিছু বছর পশুর জোগান বেশি হলে দরপতনও হয়। বাজারে পশুর দাম নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের ওপর। তাই প্রশাসন ও বেপারী উভয়ই চাইছেন এই ভারসাম্য বজায় রাখতে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হাট ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সক্রিয় রয়েছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে কোরবানির প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে, আর পশুর হাটগুলো জমে উঠছে প্রতিদিন।