চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে নতুন একটি ‘রেল কাম রোড সেতু’ নির্মিত হতে যাচ্ছে, যা দক্ষিণ চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত একটি প্রকল্প। মূল সেতুটি হবে ৭০০ মিটার দীর্ঘ এবং এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেতুটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে, এবং এর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী।
প্রকল্প অনুযায়ী, ২০২৬ সালের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে সেতুটি যানবাহন ও ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএস) থেকে প্রায় ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সহজ শর্তে ঋণ নেওয়া হবে, যার বাংলাদেশি মূল্য প্রায় ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা।
নকশা অনুযায়ী, সেতুটি বিদ্যমান পুরাতন রেলসেতুর ৭০ মিটার উজানে নির্মিত হবে এবং এতে থাকবে চার লেনের সড়ক ও একটি রেললাইন। সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে ৬.২ কিলোমিটার রেলপথ (ভায়াডাক্ট), ৪.৫৪ কিলোমিটার রেলপথের বাঁধ এবং ২.৪ কিলোমিটার সড়ক পথ। পানি থেকে সেতুর উচ্চতা হবে ১২.২ মিটার। সম্পূর্ণ প্রকল্পের জন্য ১৪১ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ২০ জোড়া ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, সেতুর দৈর্ঘ্য তুলনামূলক কম হলেও ভায়াডাক্ট, বাঁধ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ব্যয় বেশি হবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের ১৪ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেতুর নির্মাণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার পর মূল নির্মাণকাজ শুরু হবে।
বর্তমানে ব্যবহৃত কালুরঘাট সেতুটি ১৯৩১ সালে নির্মিত হয়েছিল। এর মেয়াদ ২০১১ সালেই শেষ হয়ে গেছে। পুরাতন সেতুর সংস্কার শেষে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর এটি পুনরায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়, কিন্তু এটি একমুখী হওয়ায় ট্রেন চলাচলের সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। নতুন সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়ার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ ও নিরাপদ হবে।