ঢাকাশনিবার, ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশের সীমান্তে আরাকান আর্মির দখলদারিত্ব!

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ১৬, ২০২৫ ৯:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা বর্তমানে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মংডু টাউনশিপ দখলের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ২৭০ কিলোমিটারজুড়ে এ গোষ্ঠীর প্রভাব বাড়ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ মাদক পাচার ও ভারী অস্ত্রের সরবরাহ শুধু সীমান্ত এলাকা নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আরাকান আর্মির তহবিলের প্রধান উৎস ইয়াবা ব্যবসা। মিয়ানমার-চীন সীমান্তের ওয়াফেনী ও এংন এলাকায় আরাকান আর্মি ১৫টি ইয়াবা কারখানা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত ইয়াবা তারা প্রতি কাটে ৮-১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে পাচার করছে। প্রতিদিন ১০ হাজার পিস ইয়াবা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশি কারবারিদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বান্দরবানের ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম সীমান্তে অন্তত ১০০টি পয়েন্ট ব্যবহার করে স্থলপথে ইয়াবার চালান প্রবেশ করছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের টেকনাফ, ফিশারিঘাট, মহেশখালী ও পতেঙ্গা উপকূল দিয়ে জলপথে চলে আসছে বড় বড় চালান। পরে সেগুলো বরিশাল, চাঁদপুর ও খুলনার মোংলা বন্দর হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে।

মাদক বিক্রির অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর হয়ে ডলার ও কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) হিসেবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে আরাকান আর্মির হাতে। এসব অর্থেই ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

হোয়াইক্ষ্যং ইউপি সদস্য জালাল আহমেদ বলেন, “সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অবাধে চলাফেরা করছে। শুধু মাদক নয়, আরাকান আর্মির সদস্যরা খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও বাংলাদেশ থেকে পাচার করছে। তাদের জিরো পয়েন্টে অবাধ যাতায়াতে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে।”

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত হলে আরাকান আর্মি পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে নজর দিতে পারে। অনেক সদস্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিয়ে করে বসতি গড়েছেন, ফলে সীমান্তে তাদের গতিবিধি প্রায় ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “আরাকান আর্মি এখন পুরোপুরি মাদকের অর্থনির্ভর একটি গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তাদের অস্ত্র কেনা-বেচা, সরঞ্জাম জোগান—সবই চলে মাদক বিক্রির টাকায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে এখনই কঠোর হতে হবে। শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের মতো অবস্থা যেন না হয়।”

তবে বিজিবির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কর্নেল শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, “সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মাদক ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মাদক এবং সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশকারী আটক হয়েছে।”