ঢাকাবুধবার, ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কালুরঘাটে রেল-কাম-সড়ক সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা, আনন্দে ভাসছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ১৪, ২০২৫ ২:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর বহুল প্রত্যাশিত রেলসহ সড়ক সেতু নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে, যা দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বুধবার, ১৪ মে বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ভিত্তিপ্রস্তরের স্মারক ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

উদ্বোধনকালে ড. ইউনূস বলেন, “কালুরঘাট সেতুর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িত। এই সেতুর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। আজ এখানে বোয়ালখালীর বাসিন্দারাও উপস্থিত। তাদের বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত এই সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রামবাসীর অনেক কষ্টের অবসান ঘটবে।”

এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি নতুন সেতু। বর্তমানে যে সেতুটি রয়েছে, তা ১৯৩১ সালে নির্মিত। ধরেও যদি তার মেয়াদকাল ৮০ বছর ধরা হয়, তবে সেটি ২০১১ সালেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে নতুন একটি সেতুর প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল।

দীর্ঘদিনের এই দাবির পূরণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। বৃহস্পতিবার, ১৫ মে সকাল ৯টায় কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হবে, যা আয়োজন করেছে বোয়ালখালীর সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কালুরঘাটে রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০২৬ সালের শুরুতে এবং যানবাহন ও ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে ২০৩০ সালে। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে সহজ শর্তে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ধরে)। এর মধ্যে ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) থেকে আসবে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএস) থেকে ৯ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, নতুন সেতুটি বিদ্যমান রেলসেতুর ৭০ মিটার উজানে নির্মিত হবে। এটি চার লেনবিশিষ্ট হবে — দুই পাশে দুইটি করে লেন। এক পাশে থাকবে রেললাইন, অপর পাশে চলবে সাধারণ যানবাহন, বাস ও ট্রাক। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার, যার উচ্চতা নদীর পানি থেকে ১২.২ মিটার। ভায়াডাক্টসহ মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৬ কিলোমিটার। সমীক্ষা অনুযায়ী, সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলবে ২০ জোড়া ট্রেন এবং প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন।

প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্মাণকাজ শুরু হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০৩০ সালেই সেতুটি দিয়ে যান ও ট্রেন চলাচল শুরু হবে — যা চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে।