ঢাকাসোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘ভীতিকর গোয়েন্দা রিপোর্ট’ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের মোদিকে ফোন

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ১১, ২০২৫ ৫:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিরসনে গোপন কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নেওয়ার আশঙ্কায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানান।

সিএনএনকে দেওয়া তথ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, গত শুক্রবার (৯ মে) সকালে ওয়াশিংটনে একটি স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য পৌঁছানোর পর, মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সংকট নিরসনে সক্রিয় হন। যদিও গোয়েন্দা তথ্যটির প্রকৃতি জানানো হয়নি, তবে তা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স, অন্তর্বর্তী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস অবিলম্বে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথমে অবহিত করার পর ভ্যান্স শুক্রবার দুপুরে মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। আলোচনায় ভ্যান্স ভারতকে উৎসাহিত করেন যেন তারা সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুঁজে বের করে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, সে সময় দুই দেশের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। ভ্যান্স আলোচনায় একটি ‘অফ-র্যাম্প’ বা সম্ভাব্য সমঝোতার পথের ধারণা তুলে ধরেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা অনুযায়ী পাকিস্তানের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

এর পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তারা ভারত ও পাকিস্তানের নিজ নিজ সমকক্ষদের সঙ্গে মধ্যরাত পর্যন্ত ফোনে আলোচনা চালিয়ে যান। রুবিও আগেই আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি-ভিত্তিক কাঠামো নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছিলেন বলেও জানা যায়।

যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে শনিবার সকালে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রুবিওও টুইট বার্তায় এই সমঝোতার কথা নিশ্চিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় ভ্যান্স ও রুবিওর নেতৃত্বে যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে, তার ফলেই দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। তবে সংঘর্ষ থেমে গেলেও যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করা হলেও ভারত সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “আঞ্চলিক শান্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাই।” বিপরীতে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানান, এই চুক্তি দুই দেশের সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এড়িয়ে চলতে চায়, যেখানে পাকিস্তান বরাবরই আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে স্বাগত জানায়। এ কারণে মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়ে দুই দেশের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকাটাই স্বাভাবিক।