ঢাকাবৃহস্পতিবার, ৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর জামেয়ায় অস্ত্র উদ্ধারের মিথ্যা দাবি, পরে দুঃখ প্রকাশ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ৮, ২০২৫ ১:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন ও সম্মানিত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসায় সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরের আমির ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী।

এই দাবি ‘ভিত্তিহীন, মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও ইসলামি ব্যক্তিত্বগণ, যার মধ্যে রয়েছেন জনপ্রিয় বক্তা আল্লামা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী।

৬ মে (মঙ্গলবার) ঐতিহাসিক ‘বালাকোট দিবস’ উপলক্ষে দেওয়ানবাজারের বাংলাদেশ ইসলামিক একাডেমিতে আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন শাহজাহান চৌধুরী।

সেখানে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী প্রত্যেকটা হলে হলে তল্লাশি করেছে। অনেক অস্ত্র পাওয়া গেছে জামেয়া মাদরাসাতে। ওই অস্ত্র সব ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের। এগুলো এতদিন লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। একইভাবে মাইজভান্ডার ও আমিরভান্ডারে তল্লাশি চালালে সেখানেও অস্ত্র পাওয়া যাবে।”

 

এই বক্তব্য জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

নানা নেতিবাচক মন্তব্য ও তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ভিডিওটি পেজ থেকে মুছে ফেলা হলেও ভিডিওর অংশ বিশেষ এখনো বিভিন্ন প্রোফাইল ও পেইজে ঘুরছে।

এই বক্তব্যকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি কাজী আব্দুল আলীম রিজভী। তিনি বলেন,“ঘটনার দিন সেনাবাহিনীর কোনো উপস্থিতিই জামেয়ার আশপাশে দেখা যায়নি। এ বক্তব্য পুরোপুরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।”

 

আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান বলেন, “এ ধরনের কোনো অভিযানের তথ্য আমাদের কাছে নেই।” চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলামও একই মন্তব্য করেন।

এছাড়া আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সভাপতি মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, “এটি একটি কুৎসিত অপপ্রচার। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোই এর উদ্দেশ্য।”

আল্লামা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী বলেন, “একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা কীভাবে এমন ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে পারেন? অস্ত্র উদ্ধারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো মিডিয়া কাভারেজ না থাকলে, তা নিজেই প্রশ্ন তোলে। এ ধরনের মিথ্যাচার সমাজে বিভ্রান্তি ও বিভাজন সৃষ্টি করে।”

৫ মে গাজীপুরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের নেতা মাওলানা রইস উদ্দীন কাদেরী হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রসেনার ডাকা অবরোধে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে পুলিশের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় আহলে সুন্নত কর্মীরা।
ভিডিওতে দেখা যায়, জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদল সমর্থকরা লাঠিসোঁটা ও হেলমেট পরে হামলা চালায়, সাংবাদিকদের বাধা দেয় এবং পথচারীদের ফোন চেক করে। পুলিশ ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করে ২১ জন আহলে সুন্নত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখায়।

এই ঘটনার পরদিনই শাহজাহান চৌধুরীর ‘অস্ত্র উদ্ধারের’ বিতর্কিত বক্তব্য সামনে আসে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে।

প্রতিক্রিয়ার চাপে পড়ে বুধবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “তথ্যগত বিভ্রাটের কারণে আমার বক্তব্যে জামেয়া মাদ্রাসা নিয়ে ভুল তথ্য উঠে এসেছে। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করি সবাই ইসলামি শান্তি ও ঐক্যের পথে এগিয়ে যাবেন।