বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আপসহীন নেতা বেগম খালেদা জিয়া চার মাস পর চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকায় এসে পৌঁছান। লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা ও হৃদরোগসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় তিনি দেশে ফেরেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে সরে যান খালেদা জিয়া। ওই সময় থেকে তার বড় ছেলে তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে দল পরিচালনা করে আসছেন। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারায় মামলা থেকে খালাস পান খালেদা জিয়া এবং ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান।
দলের অভ্যন্তরে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—দেশে ফেরার পর খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় হবেন কি না। বিএনপি সূত্র বলছে, তিনি এখনো দলের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও তার রাজপথে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের সিদ্ধান্তমূলক দায়িত্বে থাকবেন এবং খালেদা জিয়া দলের ‘অভিভাবক’ হিসেবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
বিএনপির অনেক নেতাই আশা করেছিলেন, খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে নিয়মিত বসবেন। তবে দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সম্প্রতি লন্ডন সফরে যাওয়া জামায়াত নেতাদের সামনে তারেক রহমান এই অবস্থান স্পষ্ট করেন।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার দেশে অবস্থান দলীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী উপস্থিতি হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে তিনি ভার্চুয়ালি দলীয় কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারেন। দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, সময় ও শরীর অনুকূলে থাকলে তিনি ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ বলেন, “আমরা আশা করি, আল্লাহ যদি নেত্রীর স্বাস্থ্য ভালো রাখেন, তিনি গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে আবারও নেতৃত্ব দেবেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিরাজমান জটিলতা ও আস্থার সংকট নিরসনে তার উপস্থিতি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তারা বলছেন, “নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মতো অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য নেতার ফিরে আসা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য ইতিবাচক বার্তা।”