মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আগামী ৫ মে (সোমবার) সারাদেশে হরতালের ডাক দিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। শনিবার বিকালে ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে আয়োজিত এক গণসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুফতি অছিউর রহমান আল কাদেরী। তিনি বলেন, “মাওলানা রইস উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পরও প্রশাসনের নীরবতা প্রমাণ করে সুন্নী জনতার প্রতি বৈষম্য এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ৫ আগস্টের মতো পরিস্থিতি আর দেখতে চাই না। অবিলম্বে বিচার শুরু না হলে কঠোর আন্দোলন হবে।”
সমাবেশ থেকে আগামী ৪ মে ‘মার্চ টু গাজীপুর’ কর্মসূচিকে সফল করারও আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে দুর্বল করে ফেলেছে। শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার বিচার এখনও ঝুলে আছে— সেই ধারাবাহিকতায় এবার গাজীপুরে খতিব মাওলানা রইস উদ্দিনকে ‘মিথ্যা অপবাদে’ নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
শায়খুল হাদীস আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আশরাফী বলেন, “পুলিশ প্রশাসন খুনিদের বিরুদ্ধে মামলাও নেয়নি। প্রশাসনের এই নির্লিপ্ততা ও পক্ষপাতিত্ব দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যদি খুনিদের গ্রেপ্তারে বিলম্ব হয়, তাহলে দায়ভার পুলিশ প্রশাসনকেই নিতে হবে।”
বক্তারা সরকারের সাম্প্রতিক কয়েকটি সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন। রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর খোলার সিদ্ধান্ত এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তারা বলেন, “মানবিক করিডোরের নামে সন্ত্রাসীদের ঢুকতে দেওয়া হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। নারী কমিশনের ইসলামবিরোধী সুপারিশও দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ মেনে নেবে না। বরং আলেম-ওলামা ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে নতুনভাবে কমিশন গঠন করতে হবে।”
সমাবেশ শেষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ব্যানারে এক বিশাল মিছিল বের করা হয়, যা লালদিঘী ময়দান থেকে শুরু হয়ে নিউ মার্কেট মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। হাজারো জনতার অংশগ্রহণে মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় ছিল।
মাওলানা রইস উদ্দিন ছিলেন গাজীপুরের একটি জামে মসজিদের খতিব। সম্প্রতি ‘মিথ্যা অপবাদে’ তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেন সমাবেশকারীরা। এ ঘটনায় দেশজুড়ে সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধে, যার পরিণতিতেই এই হরতালের ডাক।