২০২৫ সালের মে দিবস এসে গেছে, কিন্তু এবার শহরের দেয়ালে লাল পতাকার চেয়েও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রিকশাচালকদের রক্ত। শুধুমাত্র ২০২৪ সালের জুলাই মাসেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সহিংস অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন রিকশা শ্রমিক। এদের কেউ ছিলেন বাপ-দাদার ভিটেমাটি বিক্রি করে শহরে আসা, কেউ আবার সন্তানদের স্কুলের বেতন টানতে গিয়েই ফিরলেন না বাড়ি।
এই শহীদদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন সাগর, ইমন, হাফিজুর, কামাল, মাসুম, জাহাঙ্গীর, রনি, রিপন, ইসমাইলসহ আরও অনেকেই। এমনকি তালিকায় একজন অজ্ঞাত শহীদ রিকশাচালকও আছেন—যার নাম আজও কেউ জানে না, শুধু জানে কাজলা যাত্রাবাড়ীতে সে পড়ে ছিলো নিথর দেহে।
প্রশ্ন জাগে, মে দিবস কি শুধুই শোভাযাত্রা আর বামপন্থী স্লোগানের দিনে সীমাবদ্ধ থাকবে? যে শ্রমিকেরা এই শহরটাকে টেনে নিয়ে চলে প্রতিদিন, সেই শহরটাই তাঁদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় কেন? যে রাষ্ট্র ‘উন্নয়ন’ আর ‘উন্নত বাংলাদেশ’-এর জয়গান গায়, সেই রাষ্ট্র কীভাবে এই হতদরিদ্র শ্রমিকদের জীবন মুছে দেয় এত সহজে?
চলমান পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। শ্রমজীবী মানুষের সংগঠনগুলো ধীরে ধীরে নীরব হয়ে পড়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুধু রাজনীতিকদের জন্য নয়, এখন শ্রমিকদের রক্তের দামে তা আরও পোক্ত হয়েছে। পরিবারগুলো সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসছে না। ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, সামাজিক সুরক্ষা কিংবা তদন্ত—কোনোটাই হয়নি এখনও পর্যন্ত।
জুলাইয়ে শহীদ রিকশা শ্রমিকদের তালিকা:
১. শহীদ সাগর
২. শহীদ ইমন
৩. শহীদ আবু সুফিয়ান
৪. শহীদ হাফিজুর ইসলাম
৫. শহীদ কমর উদ্দিন
৬. শহীদ আবু সুফিয়ান
৭. শহীদ আসাদুল হক বাবুল
৮. শহীদ কামাল মিয়া
৯. শহীদ নুরু বেপারি
১০. শহীদ রমজান
১১. শহীদ মাসুদুর রহমান জনি
১২. শহীদ সুমন হাসান
১৩. শহীদ বিপ্লব হোসেন
১৪. শহীদ ইমন গাজী
১৫. শহীদ মাসুম মোল্লা
১৬. শহীদ জাহাঙ্গীর হাওলাদা
১৭. শহীদ বাবু মোল্যা
১৮. শহীদ কামাল মিয়া
১৯. শহীদ রনি প্রামাণিক
২০. শহীদ মনিরুজ্জামান মনির
২১. শহীদ মো: তুহিন
২২. অজ্ঞাত শহীদ রিকশাচালক(৩০), কাজলা যাত্রাবাড়ী
২৩. শহীদ বকুল মিয়া
২৪. শহীদ মনজু মিয়া
২৫. শহীদ রিপন
২৬. শহীদ ইসমাইল এবং আরো অনেকেই….
মো. ছগির নামের একজন সিএনজিচালক সিটিজিপোস্টকে বলেন, মে দিবসে আমরা যদি শহীদ রিকশাচালকদের কথা না বলি, তবে এই দিবসের কোনো অর্থ থাকে না। এই মৃত্যু শুধু রিকশাচালকের নয়—এটি আমাদের বিবেকের মৃত্যু। আমরা কয়জন তাঁদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছি?
যেখানে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয় ফ্লাইওভারে, সেখানে নিচের রাস্তায় শ্রমিকেরা রক্ত দিয়ে মেটায় শহরের গতি। কিন্তু সেই শ্রমিকদের মৃত্যুর পর নেই কোনো রাষ্ট্রীয় শোক, নেই কোনো ক্ষতিপূরণ বা তদন্ত কমিটি। সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় বা জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে নিহত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর নজিরও এখনও পর্যন্ত নেই।