বান্দরবানের রেমাক্রি মুখ এলাকায় সীমান্ত লঙ্ঘন করে ‘আরাকান আর্মি’র (AA) সদস্যদের অংশগ্রহণে জলকেলি উৎসব উদযাপনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি এলাকায় উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। তাদের প্রশ্ন—বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব কোন দিকে যাচ্ছে?
জানা গেছে, ১৭ এপ্রিল বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের রেমাক্রি বাজার সংলগ্ন সাঙ্গু নদীর চরে ‘মাহা সাংগ্রাই পোয়ে-২০২৫’ উৎসব আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় ১০ কিমি. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন ‘আরাকান আর্মি’র গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং উৎসবে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন—ইউএলএ কমান্ডার লাভ্রে (স্থানীয় নাম কুখাই রাখাইন), ইউএলএ নেতা মংথুইহ্লা মারমা, লেফটেন্যান্ট জোকা, ক্যাপ্টেন ক্যজো রাখাইন এবং ক্যাপ্টেন ভোলং। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র সদস্যরাও। পরবর্তীতে উৎসবের ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে আরাকান আর্মির অফিশিয়াল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিজিবি ও প্রশাসন এই ঘটনাকে প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বরং নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে। আয়োজনে স্থানীয় কয়েকজন উপজাতীয় নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন থানচি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো, রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈইথুই মারমা রনি, তিন্দু ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মংপ্রু মারমা এবং জেএসএস যুব সমিতির নেতা নুমংপ্রু মারমা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন বলেন, “এই উৎসবকে ব্যবহার করে আরাকান আর্মি পার্বত্য অঞ্চলে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এতে স্থানীয় সহযোগিতাও ছিল বলেই তারা এমন আয়োজন করতে পেরেছে।”
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার জানান, “ঘটনাটি সত্য। জায়গাটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় তদন্তে কিছু সময় লাগছে। তবে আরাকান আর্মির সদস্যদের উপস্থিতি নতুন নয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিষয়টি ভবিষ্যতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে, বিশেষত যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে আরাকান আর্মির চলাচল ও প্রভাব বাড়তে থাকে।