ঢাকাশনিবার, ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কাপ্তাই হ্রদের জলে জলে ভাসানো হয়েছে বিজুর ফুল, পাহাড়জুড়ে বৈসাবির আমেজ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ১২, ২০২৫ ১:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা নিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ভেসে গেল বিজুর ফুল। এভাবেই সূচনা হলো তিন দিনব্যাপী বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতার—পাহাড়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলোর সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব।

শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরবেলা, রাঙামাটির কেরানী পাহাড় এলাকায় শত শত পাহাড়ি তরুণ-তরুণী জড়ো হন কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত তরুণীরা পিনন-হাদি পরে, আর তরুণরা ধুতি-পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে হাতে ফুল ও পাতা নিয়ে উপস্থিত হন গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনার জন্য। কলাপাতায় সাজানো সেই ফুল পানিতে ভাসিয়ে তারা প্রার্থনা করেন নতুন বছরের শুভকামনার জন্য।

এই প্রাচীন রীতি শুধু ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি পাহাড়িদের জীবনের এক আবেগঘন আত্মিক যোগসূত্র। বিশ্বাস করা হয়, ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পুরনো বছরের সব দুঃখ, কষ্ট ও অশুভ ঘটনাকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, আর নতুন বছরের জন্য আহ্বান করা হয় শান্তি, সমৃদ্ধি ও আনন্দ। একইভাবে জেলার অন্যান্য এলাকাতেও, যেমন সাজেক, লংগদু, কাউখালী ও বিলাইছড়িতেও একই ধারায় শুরু হয়েছে বৈসাবির প্রথম দিন।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, রাঙামাটি উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে এই উৎসব এক অপূর্ব সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে এবং নতুন বছর এই বন্ধনকে আরও মজবুত করবে।

বৈসাবির পরবর্তী দিন, অর্থাৎ রবিবার পালিত হবে চৈত্র সংক্রান্তি। এদিন পাহাড়িদের ঘরে ঘরে চলবে পাঁজন রান্না, বন্ধু ও আত্মীয়দের আতিথেয়তা, আর সামাজিক মিলনমেলা। এরপর সোমবার, বাংলা নববর্ষের দিনে, বিভিন্ন বিহারে বিহারে প্রার্থনার আয়োজন হবে। মারমা সম্প্রদায় একইদিন উদযাপন করবেন জলকেলির মধ্য দিয়ে ‘সাংগ্রাই’ উৎসব।

বৈসাবি শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্বকীয়তার প্রতীক। এই উৎসব বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়—বাংলাদেশ একটি রঙধনুর মতো দেশ, যেখানে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মিলনেই গড়ে ওঠে আমাদের এক বর্ণিল সমাজ। সম্প্রীতির এই ধারা আরও বিস্তৃত হোক, আগামীর বাংলাদেশ হয়ে উঠুক বৈচিত্র্যে একতাবদ্ধ এক শান্তির ভূমি।