গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বাংলাদেশ। ঢেউ তুলেছে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, গর্জে উঠেছে শত সহস্র মানুষ। তবে এই ন্যায্য প্রতিবাদের ছায়ায় জন্ম নিয়েছে নাশকতা, সহিংসতা আর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র! পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৭২ জন গ্রেপ্তার, দায়ের হয়েছে ১০টি মামলা। তদন্তে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সোমবার শুরু হওয়া গাজা গণহত্যা-বিরোধী বিক্ষোভ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রধান শহরগুলোয়। চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর, কক্সবাজার, বগুড়া— কোথায় নেই সেই উত্তাল জনতা? কিন্তু আবেগের ঢেউয়ে কিছু ‘ঘাপটি মেরে থাকা শক্তি’ যেন সুযোগ খুঁজছিল দীর্ঘদিন ধরেই।
চট্টগ্রামের শহরতলিতে রাতে অভিযান
চট্টগ্রাম নগরীতে ইসরাইলি আগ্রাসন বিরোধী মিছিল থেকে নগরীর পিৎজা হাট, পুমা শোরুমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগে চট্টগ্রাম থেকে যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এদের তিনজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এবং একজন যুবলীগের কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাতে নগরীর খুলশী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ এ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার চারজন হলেন- খাইরুল নুর ইসলাম (২৭), মো. তামজিদ (২০), মো. ইব্রাহিম (২৬) ও মো. ইলিয়াস (৪৮)।
পুলিশ জানায়- খাইরুল, তামজিদ ও ইব্রাহিম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। খাইরুল ও ইব্রাহিমের বাসা নগরীর লালখান বাজার এলাকায়। ইব্রাহিমের বাসা ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায়। আর পশ্চিম খুলশী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব হোসেন জানান- নগরীর পিৎজা হাট, পুমা শোরুমসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, নাশকতা চালানো হয়। এ ঘটনায় আমরা চার জনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানিয়েছে, দেশে চলমান বিনিয়োগ সম্মেলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, দেশের অর্থনীতিকে অকার্যকর করতে তারা নাশকতা, ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিল।
গ্রেফতার চার জনকে খুলশী থানার মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি আফতাব। খুলশী থানায় চার জনসহ হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় চট্টগ্রামে মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হলো। এর আগে চকবাজার থানায় এক কিশোর এবং কোতোয়ালী থানায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
রেস্তোঁরা, পোশাকের শোরুমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী, খুলশী, চকবাজার ও পাঁচলইশ থানায় মোট চারটি মামলা দায়ের হয়েছে।
দেশজুড়ে এই সহিংসতার জবাবে পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম সরাসরি নির্দেশ দেন অভিযুক্তদের ধরতে। বলা হয়, এদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে, এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ৭২ জনের মধ্যে খুলনা থেকে ৩৩ জন, সিলেট ১৯, চট্টগ্রাম ৫, গাজীপুর ৪, নারায়ণগঞ্জ ৪, কক্সবাজার ৪ এবং কুমিল্লা থেকে ৩ জন।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়েছে— ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে, এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নাগরিকদের প্রশ্ন এখন একটাই— দেশের স্বার্থবিরোধী এই হামলা কি শুধুই কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবকের কাজ, না কি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত?