ঢাকাসোমবার, ৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এনসিপি নেতাদের ধর্ষণ ও হত্যার হুমকির পর আত্মহননের চেষ্টা ছাত্রদল নেত্রী নওরিনের

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ৭, ২০২৫ ১:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরিন উর্মি অনলাইনে ধারাবাহিক ধর্ষণ ও হত্যার হুমকির শিকার হওয়ায় আত্মহননের চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার পরিবার দাবি করছে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহিংসতা, অনলাইন বুলিং ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার অভাব—সবকিছু মিলে মানসিকভাবে চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এই নেত্রী।

গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রাতেই উর্মি হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনেন।

জিডিতে উর্মি উল্লেখ করেছেন, তিনি ফেসবুকে এনসিপির কেন্দ্রীয় ও বরিশাল মহানগরের কিছু নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পরপরই একাধিক ফেসবুক আইডি থেকে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়। ‘সজীব সরকার’ ও ‘মোহন হোসেন রিজওয়ান’ নামের আইডি থেকে অশ্রাব্য গালাগাল এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।

এছাড়া ‘রাফি আহমেদ’ নামের একটি আইডি থেকে ইনবক্সে পাঠানো হয় ভয়াবহ হুমকি—”রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে তিন দিন ধর্ষণের পর নগ্ন অবস্থায় ডেডবডি ফেলে রাখার” হুমকি। এই হুমকির স্ক্রিনশটসহ উর্মি সামাজিক মাধ্যমে পুনরায় পোস্ট দিলে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে।

ছাত্রদল নেত্রী উর্মি বলেন, “রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকতেই পারে, কিন্তু সমালোচনার জবাব ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে নয়। এই বর্বরতা রাজনীতিকে কলুষিত করে এবং রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থা ধ্বংস করে দেয়।”

নওরিনের বড় বোন ফাতেমা তুজ জোহরা, যিনি কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহ-মানবাধিকার সম্পাদক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে জানান, তার ছোট বোন নওরিন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।

তিনি লেখেন, “আজ আমি কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, একজন বড় বোন হিসেবে এই লেখাটি লিখছি। আজ সকালে আমার বোন আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছে। আপনারা সমালোচনা করবেন জানি, কিন্তু আমরা একটা অনলাইন সহিংসতার বিস্ফোরণের মধ্যে বেঁচে আছি।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও লেখেন, “যেসব নেতারা কর্মীদের ব্যবহার করে নেতা হয়েছেন, বিপদে পড়লে তারা কর্মীদের বেওয়ারিশ বানিয়ে দেন। এনসিপির নেতারা ধর্ষণের হুমকি দেওয়া ব্যক্তিদের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দেয়, অথচ আমাদের দলের কেউ একটি বিবৃতিও দেয় না, বলেও না—‘এই নারী আমাদের কর্মী, আমরা তার পাশে আছি।’”

নওরিনের পরিবার মনে করে, তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করার চেষ্টা চলছে। তারা বলছে, নওরিন দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু যখন তাকে সর্বোচ্চ সমর্থন দরকার, তখন দলের নীরবতা তাকে চরম হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, “আমরা চাই না আমাদের বোন রাজনীতিতে থাকুক যদি এটাই তার মূল্য হয়। আমরা শুধু চাই, সে যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে।”

নওরিনের অভিযোগ: এনসিপির ছত্রছায়ায় ধর্ষণের হুমকি

নওরিন ও তার পরিবার বারবার অভিযোগ করেছেন, এনসিপি ও তাদের সহযোগী প্ল্যাটফর্মের নেতারাই তাকে নিশানা করেছেন। যেসব ফেসবুক আইডি থেকে হুমকি এসেছে, তার স্ক্রিনশটসহ তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন।

এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ছাত্রদল থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি এখনো দেওয়া হয়নি।

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, অনলাইনে নারী রাজনীতিকদের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত নয়। রাজনীতি যদি নারীদের জন্য নিরাপদ না হয়, তাহলে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

নওরিনের ঘটনা রাজনীতিতে নারীর অবস্থান, নিরাপত্তা এবং সংগঠনের দায়বদ্ধতার প্রশ্নটিকে নতুন করে সামনে এনেছে।