ঢাকামঙ্গলবার, ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আরসার হাতে ৩৪ শরণার্থী ক্যাম্পে ২৯০ খুন !

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ২৯, ২০২৫ ১২:০২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রোহিঙ্গা জাতির মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে আত্মপ্রকাশ করা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) আজ তাদেরই জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপে পরিণত হয়েছে। গত আট বছরে সংগঠনটির হাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৯০ জন রোহিঙ্গা নেতা। শুধু হত্যা নয়, বাংলাদেশে অবস্থিত ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে আরসার নাম এখন আতঙ্কের প্রতীক। ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে সংগঠনটির সদস্যরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, “রোহিঙ্গা জাতির মুক্তির কথা বলে আরসার উত্থান হলেও পরবর্তীতে তারা রোহিঙ্গাদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পের নানা অপরাধের পেছনে তাদের হাত রয়েছে। সম্প্রতি সংগঠনের প্রধান আতাউল্লাহ গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রশাসনের কাছে তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসবে। এ তথ্য কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পে আরসার কার্যক্রম পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে।”

রোহিঙ্গা কমিউনিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আরসা কখনোই রোহিঙ্গাদের স্বার্থে কাজ করেনি। বরং তারা রোহিঙ্গাদের ছদ্মবেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সুবিধা দিতে তারা ২৯০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করেছে। যাদেরকে তারা হুমকি মনে করেছে, তাদের একে একে খুন করেছে।

২০১২ সালে আরাকানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর ২০১৩ সালে বিদ্রোহী সংগঠন ‘হারাকাহ আল ইয়াকিন’ আত্মপ্রকাশ করে, যা পরে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ নামে পরিচিতি লাভ করে। শুরুতে সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং হাজারো রোহিঙ্গা এতে যোগ দেয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই এটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আরসা মিয়ানমারের পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় আসে। এর প্রতিশোধ নিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়, যার ফলে প্রাণ বাঁচাতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরপর থেকেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নেতা আয়েস বিন রশিদের হত্যার মাধ্যমে আরসার ‘স্বজাতি নিধন’ মিশন শুরু হয়।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আরসার হাতে খুন হন রোহিঙ্গা ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা মুহিবুল্লাহ। এরপর একের পর এক রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা, ক্যাম্পের মাঝি, সাব মাঝি এবং অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের হত্যা করতে থাকে সংগঠনটি। সম্প্রতি ১৭ মার্চ ক্যাম্প-১৫-এ হাফিউর রহমান আরসার সর্বশেষ শিকারে পরিণত হন। শুধু রোহিঙ্গারাই নয়, আরসার হাতে বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদীসহ বহু সাধারণ বাংলাদেশিও প্রাণ হারিয়েছেন।

খুনের পাশাপাশি অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপরাধে লিপ্ত রয়েছে আরসা। মানবাধিকার সংস্থা ফরটিফাই রাইটস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। তাদের সহিংসতায় ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ১৫৫ জন নিহত হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরসার নেতৃত্বে থাকা আতাউল্লাহর গ্রেপ্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সঠিক কৌশল গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশের প্রশাসন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে আরসার প্রভাব পুরোপুরি নির্মূল করতে পারবে।