ঢাকাবুধবার, ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাসস-এ অসাংবাদিকদের আধিক্য, নিয়োগে রাজনৈতিক চাপ: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ২৫, ২০২৫ ১:১৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন শনিবার (২২ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস-এ সাংবাদিকদের তুলনায় অসাংবাদিকদের আধিক্যের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাসসের অনুমোদিত জনবল সংখ্যা ১৯৯ জন হলেও এর মধ্যে মাত্র ৯৯ জন সাংবাদিক এবং ১০০ জন অসাংবাদিক। ফলে সাংবাদিকতার মূল কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বাসসে রিপোর্টার ও সাব-এডিটর সংকট রয়েছে, কারণ অধিকাংশ নিয়োগপ্রাপ্তরা বিশেষ সংবাদদাতা বা বিশেষ গ্রেডের পদে আছেন। একে তিনি “উল্টো পিরামিড” কাঠামোর প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাসসের নিয়োগ প্রক্রিয়া মূলত পরিচালনা বোর্ডের হাতে থাকার কথা থাকলেও তা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একক কর্তৃত্বে পরিচালিত হয়। একাধিক সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমিশনকে জানিয়েছেন, নিয়োগে মন্ত্রী-এমপিদের চাপ থাকে এবং রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সংগঠনগুলো বাসসকে তাদের মতাদর্শের সাংবাদিকদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এক তথ্যমন্ত্রী একসঙ্গে ১৩ জন নিয়োগের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাসসের সাংবাদিকতায় স্বাধীনতা সীমিত। একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রের সময়ে বিরোধীদলের বক্তব্য সরকার যতটুকু সহ্য করে, বাসসও ঠিক ততটুকুই প্রচার করতে পারে। তবে গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতা আরও বেশি বাধাগ্রস্ত হয়।

এছাড়া, সংবাদ সংস্থাটি জনদুর্ভোগ, সরকারি প্রশাসনিক ব্যর্থতা, দুর্নীতি বা সমাজজীবনের অসংগতি নিয়ে গভীর অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন করতে পারে না। বাসসের নিজস্ব সাংবাদিকদের মধ্যেও এক ধরনের “সেলফ সেন্সরশিপ” কাজ করে, যেখানে সরকার বিব্রত হতে পারে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে অপ্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান।

প্রতিবেদনে আরও সুপারিশ করা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজে না লাগানোর জন্য এবং শিক্ষানবিশ সাংবাদিকদের এক বছর সময় পার না হলে সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, “সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে সাংবাদিকতা করা, বিজ্ঞাপনের পেছনে ছোটা নয়।”

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের দুর্নীতির অন্যতম কারণ পর্যাপ্ত বেতন-ভাতার নিশ্চয়তা না থাকা। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে অনেকেই অনৈতিক পথে যেতে বাধ্য হন। ফলে সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদা ও নৈতিকতা ধরে রাখতে উপযুক্ত বেতন কাঠামো নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রতিবেদনে এসব সমস্যা সমাধানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সাংবাদিকতা এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে বাসসকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।