ঢাকাসোমবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আ.লীগের বিচার ও নিষিদ্ধকরণের দাবি ১৩ ছাত্র সংগঠনের

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ২৩, ২০২৫ ১:২৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিচার শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে সামনে আসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি।

গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। কোনো দাবিতেই নির্বাচন পেছাবে না।’ তার এই বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্রদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, আওয়ামী লীগ গত ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে যেসব অপরাধ করেছে এবং জুলাই আন্দোলনে গণহত্যা চালিয়েছে, তার জন্য দলটিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে এমন আইনে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে, যাতে তারা আর কোনোভাবেই রাজনীতি করতে না পারে।

ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত গণহত্যাকারী। তাদের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য আত্মঘাতী। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে চাইলে বিচারিক বা সংসদীয় প্রক্রিয়ায় করা উচিত।’

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচার করে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমরা নই।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাতে জুলাই আন্দোলনের রক্তের দাগ লেগে আছে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে তাদের রাজনীতি বন্ধ রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাগীব নাঈম বলেন, ‘শাপলা গণহত্যা, বিডিআর গণহত্যা ও জুলাই গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধকরণ জরুরি।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (একাংশ) কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অর্থপাচার, হত্যা-গুম ও গণহত্যার বিচার হওয়া উচিত। তবে রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ‘জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সামি আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অপরাধের সহযোগী দল ও বাহিনীরও বিচার হওয়া উচিত।’

ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল কে এম ইমরান হুসাইন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অপরাধের বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে, যাতে তারা আর রাজনীতি করতে না পারে।’

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের রাজনীতি থেকে দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সহযোগীদেরও বিচার করা উচিত।’

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের ফেরানোর চেষ্টা করলে আরেকটি বিপ্লব হবে।’

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক তাসনিম মাহফুজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে হবে।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর জোরালো আন্দোলন চলমান। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের অপরাধের বিচার করে দলটিকে রাজনীতি থেকে চিরতরে দূরে রাখতে হবে। এই দাবি বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।