রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ বা আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে আরসার অস্ত্রভান্ডার এখনো অক্ষত থাকায় বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
সোমবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে র্যাবের অভিযানে আরসার প্রধান আতাউল্লাহসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আতাউল্লাহ ডিজিএফআইয়ের এক কর্মকর্তা হত্যা এবং রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার আসামি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে সাত বছরে আশ্রয়শিবিরে ২৫২ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। ২০২৪ সালে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে নিহত হন ৬৭ জন। বেশিরভাগ খুনের ঘটনা আরসার সঙ্গে আরএসও ও নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ঘটেছে।
আতাউল্লাহর গ্রেপ্তারে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা স্বস্তি প্রকাশ করলেও, আরসার অস্ত্রভান্ডার এখনো অক্ষত থাকায় নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, আতাউল্লাহকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আশ্রয়শিবিরে মজুত রাখা বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদের সন্ধান মিলতে পারে। এছাড়া অস্ত্র ও অর্থের জোগানদাতাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
রোহিঙ্গা নেতারা আরও জানান, ২০১৮ সালে আশ্রয়শিবিরে আরসার নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে মুহিবুল্লাহ হত্যার পর তারা সমর্থন হারায়। আতাউল্লাহসহ শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় আশ্রয়শিবিরে থাকা আরসার সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের প্রতিহত করতে সক্রিয় রয়েছে। এতে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কক্সবাজারের লেদা রেজিস্টার ক্যাম্পের বাসিন্দা আবু মুসা বলেন, “আরসা সমর্থকেরা বড় কিছু ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা শিবিরের সবার। এ জন্য ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার।”
বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও হামলার শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা রুপলা ধর বলেন, “আরসাপ্রধান গ্রেপ্তারে তাঁদের সদস্যরা অপরাধ সংঘটিত করতে পারেন। এখানে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাদের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার না হলে সীমান্তে অস্থিরতা চলতেই থাকবে।”
আরসার ভান্ডারে থাকা অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবদুল করিম বলেন, “আরসার বিষয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি, সর্বদা সতর্ক আছি। কোনো তথ্য পেলে আমরা অভিযান চালাব।”
আতাউল্লাহর পটভূমি:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সিকদারপাড়ায় আতাউল্লাহর বাড়ি। ১৯৬০ সালের দিকে তাঁর বাবা পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানেই জন্ম আতাউল্লাহর। তিনি সৌদি আরবের মক্কায় পড়াশোনা করেন। ২০১২ সালে সৌদি আরব থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এরপর আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তাঁর নাম শোনা যায়। ২০১৬ সালে তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন গড়ে তোলেন বলে মনে করা হয়। ওই বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের সীমান্তচৌকিতে হামলা চালান। তাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে অনলাইনে ভিডিও বার্তা প্রচার করেন আতাউল্লাহ। এর পর থেকে আরসা ও আতাউল্লাহ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
গ্রেপ্তারের পর আতাউল্লাহসহ ৬ জনকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়শিবির ও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা এখন আরসার অবশিষ্ট সদস্যদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্রভান্ডার উদ্ধারে দ্রুত অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন।