ঢাকাবৃহস্পতিবার, ২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্বামীর জন্য ভিক্ষা করার ঘোষণা দিলেন ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের স্ত্রী!

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ১৯, ২০২৫ ১১:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’কে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলার আসামি সাজ্জাদকে আদালতের নির্দেশে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তায় হাজির হন সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন। তিনি বলেন, “আমার জামাই গতকালকে অ্যারেস্ট হইছে। এটা নিয়ে এত হায় হুতাশ করার কিছু নাই। ঠিক আছে, মামলা যখন আছে অ্যারেস্ট হবেই। এগুলো নিয়ে এত দুঃখ করে কান্নাকাটি করার কিছুই নাই। আপনারা যারা ভাবতেছেন আমার জামাই অ্যারেস্ট হইছে, আর কোনদিন বের হবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।”

ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, “আমরা কাড়ি কাড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব। আমার জামাই বীরের বেশে ফিরে আসবে। যারা এ ঘটনা ঘটাইছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না মাথায় রাইখো। এতদিন আমরা পলাতক ছিলাম। এখন তোমাদের পালা। আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমার কাছে আসবে। তখন খেলা শুরু হবে। খেলা মাত্র শুরু করছ তোমরা, শেষ করব আমরা। ঠিক আছে?”

এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দেন শারমিন। তবে এরপরেও আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি বলেন, “আমাকে গালমন্দ করে যারা ভিডিও করতেছেন, যারা ফেসবুকে পোস্ট করতেছেন—আমি আসলে ভাই আপনাদের কোনো ক্ষতি করিনায়। আমি আপনাদের নাম ধরবো না। আপনারা জানেন আমি কাকে বলতেছি। আপনারা আমাকে নিয়ে পোস্ট করে কি লাভ? আমি তো আপনাদের দুশমন না, শত্রুও না। আমি ভালোবেসে সাজ্জাদকে বিয়ে করেছি। আপনারা কে কার সাথে এন্ট্রি সেটা দেখার বিষয় না। আমি যদি আপনাদের নিয়ে পোস্ট করতাম, আপনারাও আমাকে নিয়ে পোস্ট করতেন, এটা একটা সৌন্দর্য।”

তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামীর জন্য যদি ভিক্ষা করতে হয়, আমি তাই করবো। আপনারা এগুলা নিয়ে কথা বলতে পারেন না। যারা আমাকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করতেছেন, লাইভ করতেছেন বা স্ট্যাটাস দিচ্ছেন—আমি সবকিছু ভিডিও রেকর্ড করে সাইবার ক্রাইমের মামলা করছি আপনাদের বিরুদ্ধে। ইনশাআল্লাহ সবইকিছু একদিন সমাধান হবে।”

গত শনিবার সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “প্রবাসে অবস্থান করা ‘বড়’ সাজ্জাদের প্রশ্রয়ে ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বায়েজিদ, চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতেন।”

গত ২৮ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন সাজ্জাদ। লাইভে তিনি বলেন, “তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো। কোর্টের রায় আসা পর্যন্ত তোরা টিকে থাকবি। যেখানেই থাকস আমি পিটাবো। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো, তোদেরকে মেরে। তবুও আমি হার মানবো না। দেখি, তোদের জোর বেশি না আমার। আরিফ তুই প্রস্তুত থাকিস। তোর উচ্চপদস্থ যারা আছে তাদেরকে বলিস।”

এরপর ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেনকে আইনের আওতায় আনার জন্য তার অবস্থান সংক্রান্তে সঠিক তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করবে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। সংবাদদাতার সহায়তাকারীর পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখা হবে।”

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানার শিকারপুর এলাকার বাসিন্দা।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সাজ্জাদ কিশোর বয়সেই অপরাধ জগতে পা রাখেন। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী।

এরপর ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করলেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

জামিনে বেরিয়ে এসে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

এছাড়া ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তার সহযোগীদের নিয়ে। ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে ঠিকাদার মো. হাসানের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি চালায় সাজ্জাদ বাহিনী।

সবশেষ, ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় সাজ্জাদকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালান সাজ্জাদ। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন আহত হন।

তবে এবার আর পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাননি চট্টগ্রামের শীর্ষ এই সন্ত্রাসী। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। সাজ্জাদ বাহিনীকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে।”

তবে সাজ্জাদের গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী তামান্না শারমিনের ভিডিও বার্তাগুলো নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করে চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় কি না।