নারায়ণগঞ্জের গভীর রাত। অন্ধকারের চাদরে ঢাকা শহর। সবার অগোচরে, একটি বহুতল ভবনের অভ্যন্তরে চলছিল গোপন ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের মাটিতে বসে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিলো সন্ত্রাসের বিষবাষ্প। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
১৭ মার্চের ভোররাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে র্যাবের গোপন অভিযানে ধরা পড়ে গেলো রোহিঙ্গাদের কুখ্যাত আতঙ্ক, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী। তার সঙ্গে ধরা পড়ে আরও পাঁচ সহযোগী। এ যেন রোহিঙ্গাদের অভিশাপের অবসান!
যার কারণে লাখো রোহিঙ্গাকে আজ শরণার্থী জীবন কাটাতে হচ্ছে, সেই আতাউল্লাহ কি কখনো তাদের নেতা হতে পারে? যে নিজের ক্ষমতালোভের বলি বানিয়েছে হাজারো নিরপরাধ নারী-পুরুষকে? ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট তার নির্দেশেই রাখাইনে হামলা চালায় আরসা। ফলাফল? মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম প্রতিশোধ। ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই, নারীরা ধর্ষিত, শিশুরা বাবা-মা হারায়। আতাউল্লাহর এক ভুল সিদ্ধান্তে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়।
ক্যাম্পের ব্যবসা-বাণিজ্য, সালিশ বৈঠক, মাদক কারবার ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় আরসা। প্রতিদ্বন্দ্বী নিধন ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সহযোগিতাকারীদের টার্গেট করে হামলার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যেখানে আতাউল্লাহর শাসন, সেখানে অন্য কোনো কণ্ঠস্বরের ঠাঁই নেই। রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় মুহিব্বুল্লাহকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি আতাউল্লাহ। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ১২ জনের কিলার স্কোয়াড তাকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে। রক্তাক্ত মুহিব্বুল্লাহর দেহ পড়ে থাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, আতাউল্লাহ তখন নিরাপদ দূরত্বে বসে তার পরিকল্পনার সফলতা উদযাপন করছিলো!
কিন্তু এবার আর সে পার পেলো না! র্যাবের কাছে আগেই খবর ছিল, আতাউল্লাহ ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশে নাশকতা চালানোর জন্য নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লীতে গোপন বৈঠক করছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের বিশেষ বাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। গভীর রাতে অতর্কিত হামলায় আতাউল্লাহসহ ছয়জন গ্রেফতার হয়। উদ্ধার হয় নগদ ২১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।
আতাউল্লাহর রাজত্ব কি এবার সত্যিই শেষ হতে চলেছে? আদালত ইতোমধ্যেই তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তার কুকীর্তির ফিরিস্তি আরও দীর্ঘ, আরও ভয়ংকর। রোহিঙ্গাদের জীবনে সে যেমন এক অভিশাপ, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য এক মূর্তিমান আতঙ্ক। এখন প্রশ্ন একটাই—এবার কি এই অভিশাপের চিরতরে অবসান হবে? নাকি আবারও কোনো অন্ধকার গহ্বর থেকে সে ছোবল মারবে?