ঢাকাসোমবার, ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ গ্রেফতার, ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ১৬, ২০২৫ ৬:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে ঢাকার বসুন্ধরা শপিংমল থেকে তাকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে শপিং করছিলেন বলে জানা গেছে। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে থানার ওসিকে হুমকি, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারেরও ঘোষণা দিয়েছিল পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর রোববার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় সাজ্জাদকে ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সাজ্জাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে গত বছরের ২৯ আগস্ট ও ২১ সেপ্টেম্বরে তিনজনকে গুলি করে হত্যা। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করলেও পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।

জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। তারও আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

গত বছর ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।

গত বছরে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়ায় আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরোধে তাহসিন নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাহসিন ছিলেন সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ বাবলা গোষ্ঠীর অনুসারী।

সাজ্জাদের বেপরোয়া আচরণের আরও একটি উদাহরণ হলো, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। সাজ্জাদ বলেন, “তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো।” এ ঘটনায় ওসি আরিফুর রহমান একটি জিডি করেন।

সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে তাকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালায় সে। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।

অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ নেতার আশ্রয়ে চলে যান তিনি। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা তার আতঙ্কে দিনাতিপাত করেন। নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী।

সাজ্জাদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড আদেশের পর চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে এবং তার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।