২৭ বছর বয়সী নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের যুব-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর অন্যতম মুখ ছিলেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক নাহিদ গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি)-এর নেতৃত্ব নেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংস্কারের ইচ্ছার অভাব রয়েছে।
নাহিদ এএফপিকে বলেন, “যেসব সংস্কারের জন্য তরুণরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে, সেগুলো নিয়েও তারা আগ্রহী নয়। গণ-আন্দোলন ও তার পরবর্তী সময়ে আমরা যে অঙ্গীকার করেছিলাম, তা বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এই রাজনৈতিক দল গঠন করেছি।”
গত বছরের আন্দোলনে ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। নাহিদসহ অন্যান্য ছাত্রনেতাদের আটক করে আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তা সফল হয়নি। শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দেন নাহিদ।
এনসিপির নেতৃত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে নাহিদকে সেই সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হয়, যেখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রত্যাশা ছিল। আগামী মার্চের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, এবং ধারণা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে জয়ী হবে।
নাহিদ বলেন, “যদিও আমরা হয়তো এবার সরকার গঠন করতে পারব না, কিন্তু আমরা এমন একটি রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করেছি যা আগামী কয়েক দশক ধরে প্রভাব বিস্তার করবে। কেউ ভাবেনি যে এমন একটি গণ-আন্দোলন হবে, কিন্তু তা ঘটেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমরা এবার জয়ী হব। তবে এই নির্বাচনই সব শেষ নয়… আমাদের লক্ষ্য এই শক্তিকে আরও ৫০ বা ১০০ বছর ধরে টিকিয়ে রাখা।”
‘সকলের জন্য সমতা’
এনসিপি এবং বিএনপির মধ্যে প্রধান বিরোধ হলো কখন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চায়, যাতে জনমতের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়। নাহিদ বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় যে আমরা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাই, কিন্তু এটি সত্য নয়।” তবে তিনি যোগ করেন, “শেখ হাসিনার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমস্যা থাকায় এখনই নির্বাচন করা সম্ভব নয়।”
এনসিপি একটি নাগরিক পরিষদ গঠনের জন্য সমন্বিত ভোটের দাবি জানাচ্ছে, যা বাংলাদেশের সংবিধানের মূলগত সংস্কারের দায়িত্ব নেবে এবং স্থায়ী গণতন্ত্র নিশ্চিত করবে।
দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
এনসিপি নিজেকে একটি বৃহৎ ও সমন্বিত দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যা গত বছরের আন্দোলনের চেতনাকে এগিয়ে নেবে। তবে দল গঠনের পর থেকেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ডানপন্থী গোষ্ঠীর চাপে দলের নেতৃত্ব কমিটি থেকে একজন সমকামী অধিকার কর্মীকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
নাহিদ বলেন, “আমরা সকলের জন্য সমতায় বিশ্বাস করি, তবে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত কিছু সীমা রয়েছে। আমরা নারীদের এগিয়ে নিয়ে এসেছি এবং সকল বর্ণ ও ধর্মের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছি। আমরা সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করব।”