চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মাইকে ডাকাত আসছে বলে গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন।
সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছনখোলা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নিহত দুই যুবকদের নাম নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক। গুলিবিদ্ধ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের নেজাম উদ্দিন নামের এক রাজনৈতিক কর্মী ৫ আগস্টের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরেই তিনি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। নেজাম গ্রুপের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠে।
সোমবার নেজাম আরও কয়েকজনকে নিয়ে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় গেলে তারাবির নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর মুসল্লিরা নেজাম গ্রুপকে ঘিরে ফেলে। মসজিদের মাইক থেকেও তখন ঘোষণা দেওয়া হয় এলাকায় ডাকাত পড়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নেজাম এলাকাবাসীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে পরে নেজাম ও তার সঙ্গীদের ধরে ফেলে এবং গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নেজাম ও ছালেক নামে দুজন মারা যায়।
তবে অপর একটি পক্ষের দাবি, উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় একটি সালিশি বৈঠকে বিচারকের দায়িত্ব পালনের জন্য নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে তদেরকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, নিরাপত্তা বাহিনী আমাকে জানায় যে, ডাকাতরা যখন ডাকাতির চেষ্টা করে, তখন গ্রামবাসী মসজিদের লাউড স্পিকার ব্যবহার করে তাদের উপস্থিতি ঘোষণা করে। এ সময় ডাকাতরা পালানোর চেষ্টা করলে দুজনকে ধরে ফেলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আসল ঘটনা কি তা পুলিশের তদন্তের পর জানা যাবে।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। গণপিটুনিতে নিহত দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।