বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের যে রূপরেখা ঘোষণা করেছে তারমধ্যেই জনগণের মুক্তি নিহিত আছে। গত ১৬ বছর পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার দেশের রাষ্ট্রকাঠামোর সকল সেক্টর ধ্বংস করেছিল। পরিকল্পিতভাবে তারা দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার যে চক্রান্ত করেছিল-বিএনপি তা বুঝতে পেরেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ছিলো। আজ অনেকেই রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলছেন। বিএনপি কিন্তু গত আড়াই বছর আগে সেই কথা জাতির সামনে তুলে ধরেছিল।’
শনিবার দুপুরে যশোর ঈদগাহ ময়দানে যশোর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ফ্যাসিস্ট সরকারের চোখে চোখ রেখে বিএনপি বলেছিল-তোমরা দেশকে ধ্বংস করেছো, আমরা দেশকে গঠন করতে চাই। সে কারণেই রাজপথের সক্রিয় সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার কথা তুলে ধরেছিলাম। স্বৈরাচার অস্ত্রের জোরে যখন জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জোরপূর্বক রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন অনেকের মুখে সংস্কারের কোনো কথা আমরা শুনতে পাইনি। কিন্তু বিএনপির স্বৈরাচারমুক্ত ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিতে ৭০০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে। দলের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ গায়েবি মামলার আসামি হয়ে নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে এই আন্দোলনকে সক্রিয় করে রেখেছিল। আজ আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই-বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হলে এর সুফলগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। দেশের কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, ছাত্র-জনতা, বেকার যুব সমাজ ও নারী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ৩১ দফার বাস্তবায়ন করে কীভাবে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব তা পৌঁছে দিতে হবে। আর সেই কাজটি করতে বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মীকে জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে হবে। আজকের এই সম্মেলনের মাধ্যমে যশোরে যারা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন তাদের এটাই হবে মূল কাজ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি জনগণের জন্যই রাজনীতি করে। বিএনপি জনগণের রায় নিয়ে যতবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে ততবারই এই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করেছে। সকল ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে বিএনপি সেই দাবি কখনোই করে না। তবে আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি কোনোদিন। গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার দেশের প্রতিটি সেক্টরকে ধ্বংস করে গেছে। দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে তারা দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আজ শোচনীয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে পড়ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ বের হতে পারছে না।’
মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। আর এই সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণেই। দেশে যত দ্রুত নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন, তত তাড়াতাড়ি দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। আর দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন তরান্বিত করতেই বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। কারণ বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার দেশে নির্বাচনহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল। জনগণের রায় প্রদানের কোনো সুযোগ ছিলো না। অস্ত্র, বল আর প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা জনগণের মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছিল। আর এই কারণেই বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে রাজপথে ছিল, এখনো রাজপথেই আছে।’
যতদিন এই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, যতদিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পিত না হচ্ছে ততদিন বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন সংগ্রামে মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানান তারেক রহমান।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন-বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য আমান উল্লাহ আমান।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন-দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুন্ডু, অমলেন্দু দাস অপু, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, টি এস আইয়ুব, অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, তানিয়া রহমানসহ দলের সকল উপজেলা ও পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।