ঢাকাশনিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘সন্ত্রাসবাদকে’ হালকা করে দেখানো বাংলাদেশের উচিত হবে না, পাকিস্তান প্রসঙ্গে ভারত

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫ ১১:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে বাংলাদেশের আহ্বানের বিপরীতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক এই জোটের ঝিমিয়ে পড়ার পেছনে ফের পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে ভারত।

পাকিস্তান প্রশ্নে অনমনীয় অবস্থানে থাকার বার্তা দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর উল্টো বলেছেন, বাংলাদেশ যেন ‘সন্ত্রাসবাদকে’ হালকা করে দেখানোর অবস্থানে না যায়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ওমানের মাসকাটে জয়শঙ্করের বৈঠকে এমন আলোচনা হওয়ার কথা শুক্রবার বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল।

সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, “হ্যাঁ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী (জয়শঙ্কর) যখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের দিক থেকে বিষয়টি (সার্ক প্রসঙ্গ) তোলা হয়েছিল।

“সার্কের বাধাগ্রস্ত হওয়ার পেছনে কোন দেশ এবং কোন ধরনের কার্যক্রম দায়ী, সে বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবাই অবগত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসবাদকে হালকা করে দেখানো বাংলাদেশের উচিত হবে না।”

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের তিক্ততার মধ্যে এক দশকের বেশি সময় ধরে অকার্যকর রয়েছে সার্ক। ২০১৪ সালের পর আর কোনো শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের একমঞ্চে আনতে পারেনি এই আঞ্চলিক সংস্থা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের সঙ্গে গত ১২ ডিসেম্বরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “সার্ক আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সার্ককে সক্রিয় করার বিষয়ে বলেছি।

“ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ‘কিছু ইস্যুর জন্য’ সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না। আমি মনে করি, দুটি দেশের মধ্যকার সমস্যা অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত না।”

ইউনূস বলেন, “প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা যদি সাক্ষাৎ করেন, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যায় যে ‘আমরা একসঙ্গে আছি’।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইনডিয়ান এক্সপ্রেসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের কথা বলেন।

তিনি লিখেছেন, দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক এক দশকের বেশি সময় ধরে অকার্যকর হয়ে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সার্ককে কার্যকর করার জন্য ‘আন্তরিক উদ্যোগ’ গ্রহণ করেছে।

“তবে এখন পর্যন্ত ভারতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আমরা মনে করি না এই উদ্যোগ নিয়ে ভারতের ভয় পাওয়ার কিছু আছে।”

সাবেক কূটনৈতিক তৌহিদ হোসেন সেখানে লিখেছেন, “আমরা জানি, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তবে, হাজার মাইলের যাত্রা একটি ছোট পদক্ষেপে থেকেই শুরু হয়।

“প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের নেতৃবৃন্দ কি অন্তত একটি সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে পারেন না?”

সার্ক পুনরুজ্জীবনে বাংলাদেশের আহ্বানের মধ্যে রোববার ওমানের রাজধানী মাসকাটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের।

সেখানে সার্ক নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সার্ক স্টান্ডিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে ভারত সরকারকে বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।

শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে আরেক প্রশ্নে এক সাংবাদিক জানতে চান, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিভিন্ন ভারত বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন, কোনো কোনো সময় সেগুলো বেশ হিংসাত্মক। এগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা দ্বিপক্ষীয় দরকষাকষিতে প্রভাব ফেলছে কিনা।”

উত্তরে রাণধীর জয়সওয়াল বলেন, “হ্যাঁ, আমরা এ ধরনের বক্তব্যগুলো নজরে নিয়েছি, সেগুলো অবশ্যই ভালো কিছু নয়। কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে এর প্রভাব কী পড়বে, তা সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা তুলে ধরবেন।”