চট্টগ্রাম নগরে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের প্রকাশ্যে মিছিল নিয়ে তোলপাড় চলছে। নড়েচড়ে বসেছে পুলিশও। এরই মধ্যে সংগঠনটির এক সক্রিয় কর্মীকে হাতেনাতে পান বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর পুলিশে দিলেও তাকে ছাড়াতে ‘ঢাল’ হয়ে দাঁড়ান খোদ যুবদলের এক নেতা। পুলিশ ছাত্রলীগের ওই কর্মীকে গাড়িতে তুললেও যুবদলের নেতার বাধা আর ‘কড়া আল্টিমেটামে’ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
পুলিশের দাবি, ছাত্রলীগের সক্রিয় ওই কর্মীকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে আটক করতে গিয়েছিলেন তারা। সেখানে গিয়ে এলাকাবাসীর প্রশ্নের মুখে পড়েন। আটক করে থানায় নেওয়ার সময় লোকজন জড়ো হলে ছেড়ে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন পুলিশ সদস্যরা।
অন্যদিকে, হাতেনাতে পেয়েও নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের কর্মীকে নিজ দলের লোকেরা ছাড়িয়ে নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, যাদের কারণে আওয়ামী সরকারের আমলে হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, তাদের হয়ে নিজ দলের নেতা এগিয়ে এসেছেন—এটা লজ্জার বিষয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে নগরের খুলশী থানার আমবাগান শহীদ মিনার এলাকায় হাতেনাতে মোশারফ হোসেন অভি নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে ধরে ফেলেন ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা। এরপর তারা পুলিশে খবর দিলে তাকে গাড়িতে বসিয়ে থানার দিকে রওয়ানা দেয় পুলিশ। ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন নগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হামিদ পিন্টু। ছাত্রলীগের ওই কর্মীকে আটক করে থানায় নিতে বাধা দেন তিনি। এ সময় সেখানে স্থানীয়রাও জড়ো হন। একপর্যায়ে পুলিশ অভিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
ছাত্রলীগকর্মী মোশারফ হোসেন অভি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর যুবলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ভিডিওতে দেখা গেছে, আব্দুল হামিদ পিন্টুকে ঘিরে রেখেছেন প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে উপস্থিত এক নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘দেখছেন মিছিল করতে দেখছেন? সকালে মিছিল করছে দেখেন নাই?’ উত্তরে পিন্টু প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘জিইসির মোড়ের কথা কি এখানে আমবাগানে কইবি?’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত যুবদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অভি সকালেও জিইসিতে মিছিল করেছে। সে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাতে ছিলো না। আজ এসেছে এলাকায়। আমাদের কর্মীরা খবর পেয়ে তাকে পুলিশে দেয়। কিন্তু পিন্টু ভাই এসে ওসিকে ফোন দেন। তিনি ওসিকে বলেন, ‘আমি পিন্টুকে নিয়ে যেতে হবে অভিকে নিতে হলে’। একজন নিষিদ্ধঘোষিত কর্মীর জন্যে ওনার এত প্রেম কিসের?’
আরেক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘পিন্টু ভাই ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় আমরা বাধা দিলে পিন্টু ভাই আমাদেরকে উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘আমি খসরু ভাইয়ের সাথে কথা বলবো’। এসবের মানে কি? আমরা যখন হামলা-মামলার শিকার হয়েছি তখন কেউ কি আমাদের দেখেছে? এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।’
অভিযানে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেন, ‘নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে আমাদের টিম আমবাগান এলাকায় গিয়েছিল সন্দেহভাজন একজনকে আটক করতে। পরে লোকজন সেখানে জড়ো হয়ে কেন বা কি কারণে আটক করছে—তা জানতে চেয়েছে হয়তো। এরপর তাকে ছেড়ে দিয়ে তারা চলে আসে।’
সন্দেহভাজন যার কথা বলছেন তিনি ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘ওই ধরনের স্পেসিফিক আমি বলতে পারবো না।’
এ বিষয়ে জানতে নগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হামিদ পিন্টুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, ছাত্রলীগকর্মীকে ছাড়িয়ে নেওয়া চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হামিদ পিন্টু নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বয়াক শফিকুর রহমান স্বপনের অনুসারী। স্বপনের মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নগরের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে মিছিল করেন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে ওই মিছিলের ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। জানা গেছে, মিছিলটির নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজান।
মিছিলটিতে অংশ নেওয়াদের কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী হলেন— হানিফ, ইরফান, আতিফ, নেছার, এরশাদ, নাঈম, রনি, তুষার, রানা, মিজান, ঈমন, আসিফ, হুজ্জাত, দেলোয়ার, রায়হান, অভি প্রমুখ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মিছিলের ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জিইসি মোড়ে সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের এক পাশে মিছিল করছেন ২০ থেকে ২৫ নেতাকর্মী। এ সময় তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে মহানগর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারী কমিশনার মো. রকিবুল হাসান বলেন, ‘মিছিল কারা করেছে তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা চলছে।’
আমবাগান এলাকায় ছাত্রলীগকর্মীকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা জানা নেই বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।