ঢাকাবুধবার, ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আওয়ামী লীগ সরকারের ইভিএম প্রকল্পের তিন হাজার কোটি টাকা লুট

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জানুয়ারি ২৮, ২০২৫ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেড় লক্ষাধিক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনাকাটায় বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে প্রচলিত দামের ১০ গুণেরও বেশি টাকায়। তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ইভিএম কেনার ক্ষেত্রে তিন হাজার ১৭২ কোটি টাকা রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে। সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রতিবেদন ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অডিট বিভাগ যে মূল্য ধরে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কথা বলেছে সেটা সঠিক নয়। এদিকে নিম্নমানের ইভিএম মেশিন সরবরাহের অভিযোগের তথ্য সংগ্রহে গত রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম নির্বাচন ভবনে অভিযান চালিয়েছে।

জানা গেছে, ইভিএম প্রকল্পের দুর্নীতিতে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সে সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানুজ্জামান মুহাম্মদ সালেহ উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর তারিক সিদ্দিক বিদেশে পালিয়ে গেছেন। হেলালুদ্দীন কারাগারে আছেন। বাকি অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়া জানতে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ইভিএম প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ইসির সংশ্লিষ্টরা আগে থেকেই জানলেও কেউ মুখ খোলেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ‘অসৎ পরিকল্পনায়’ ভোটের মাত্র তিন মাস আগে তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম সংগ্রহের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জানা গেছে, প্রকল্প গ্রহণের আগেই মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সঙ্গে ইভিএম কেনার সব বিষয় ফায়সালা করা হয়েছিল।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন টেন্ডার ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এসব ইভিএমের বড় লট সংগ্রহ করা হয়। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ডেলিগেশন পদ্ধতিতে (অর্পিত কাজ) মেশিন সংগ্রহ করে। আর এ পদ্ধতি কেনার বিধান রেখে প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাস করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগে ইভিএম কেনার বিষয়ে ইসি সচিবালয় ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটা সমঝোতা স্মারক এমওইউ হয়।

জানা গেছে, সেনাবাহিনী তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম সরবরাহ করেছে। এর মূল যন্ত্রটি মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।

১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনার কথা বারবার জানিয়েছিলেন তৎকালীন সিইসি। তবে শেষমেশ মাত্র ছয়টি আসনে এ মেশিন ব্যবহারে করে ভোটগ্রহণ করা হয়। অবশ্য পরবর্তী সময়ে কিছু সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ইভিএম ব্যবহার করবে না। ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সুপারিশ করেছে।

সূত্র জানায়, প্রতিটি ইভিএমের জন্য খরচ হয় দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। এ হিসাবে দেড় লাখ ইভিএম কিনতে সরকারের ব্যয় তিন হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এদিকে সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে বাজারদরের চেয়ে ১০ গুণেরও (১ হাজার ২৫ শতাংশ) বেশি দামে ইভিএম কেনা হয়। ফলে এ সংখ্যক ইভিএম কিনতে ৩৪৩ কোটি টাকার মতো খরচ হওয়ার কথা ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী তিন হাজার ১৭২ কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়েছে।

এদিকে শুধু এক অর্থবছরেরই (২০২১-২২) ইভিএম কেনাসহ কয়েকটি খাতে এক হাজার ১৯৫ কোটি টাকার গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে সরকারের অডিট দপ্তরের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের চূড়ান্ত অডিট রিপোর্টে ইভিএম কেনার অনিয়ম তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালকের কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শেখ হাসিনার সময় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে লুটপাটের সুযোগ দিতেই কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও শেখ রেহানার দেবর তারিক আহমেদ সিদ্দিক এই প্রকল্পের পেছনে ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইভিএম প্রকল্পের তৎকালীন পিডি এবং এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাচন কমিশনের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেসের (আইডিইএ) প্রকল্প পরিচালক সুলতানুজ্জামান মুহাম্মদ সালেহ উদ্দিন, কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের নির্বাচন কমিশনার ও ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের যোগসাজশে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

ওই সময় কমিশনারদের মধ্যে সিইসি কেএম নুরুল হুদা ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ছাড়া অন্য কমিশনাররা এ বিষয়ে খুব একটা অবহিত ছিলেন না। তাদের কেউ কেউ ইভিএম প্রকল্প গ্রহণ ও সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করেছিল।

সালেহ উদ্দিন ও তারিক সিদ্দিকির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত টাইগার আইডির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ইসির তথ্যভাণ্ডার একসময় টাইগার আইটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেও অভিযোগ আছে।

প্রকল্পটি গ্রহণের সময় অসত্য তথ্য দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্প গ্রহণে নিয়ম মেনে সমীক্ষা না করে কেবল কাগুজে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের সময় কাগুজে ব্যালটের তুলনায় ইভিএমে ভোট হলে ‘নির্বাচনি ব্যয় কমবে’ বলে যুক্তি দেখানো হলেও বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যালটের তুলনায় ইভিএমে ভোটগ্রহণে দেড়গুণ অর্থ ব্যয় হয়। ইভিএম পরিবহন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ভোটার এডুকেশন ও বেশি ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা মোতায়েনের কারণে এ খরচ বাড়ে।

সংসদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনি খরচ ও প্রশিক্ষণ ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কাগজের ব্যালটের তুলনায় ইভিএমে ভোটগ্রহণে সংসদ নির্বাচনে ২৯ শতাংশ, পৌরসভা নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫১ শতাংশ বেশি ব্যয় হয়েছে।

তড়িগড়ি করে গ্রহণ করা এ প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণ, পরিবহন ও মেরামত খাতে কোনো ব্যয় ধরা হয়নি। যার কারণে এটা এখন ইসির গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে বর্তমানে ৪০ হাজারের মতো ভালো রয়েছে। বাকি ইভিএমগুলো নষ্ট। হাবিবুল আউয়ালের কমিশন এসব নষ্ট ইভিএম মেরামত করার উদ্যোগ নিয়ে বিএমটিএফ এক হাজার ২৬০ কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিল। অর্থ বিভাগ ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেগুলো আর মেরামত করা যায়নি।

একেএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ইভিএম ব্যবহার না করার সুপারিশ করেছে। ফলে তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্পের পুরোটাই গচ্চা যাচ্ছে।

অডিট দপ্তরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাড়তি দামে দেড় লাখ ইভিএম কেনা, টেন্ডার ছাড়াই সরাসরি পদ্ধতিতে এসব মেশিন কেনা, আর্থিক বিধিবিধান লঙ্ঘন করে অর্থ ব্যয়সহ নানা ফাঁকফোকরে সুযোগে বাড়তি সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়।

ইভিএমের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কারসাজি করে ইসির বাজার দর নির্ধারণ কমিটি। ভারত, ব্রাজিল ও মেরিল্যান্ডে কেনা মেশিনের তথ্য অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে ওই কমিটি। কমিটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাজার যাচাই না করে অনলাইনে পাওয়া ওই তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে কেনা ইভিএমের দর নির্ধারণ করে।

ইভিম মেশিনের ওয়ারেন্টি নিয়েও শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের সময় পরিকল্পনা কমিশন থেকে ইভিএমের ওয়ারেন্টি ১০ বছর নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। তবে সিএজি তার অডিট প্রতিবেদনে বলেছে ইভিএমের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয় মাত্র এক বছর। এ কারণে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইভিএম মেরামত যোগ্য হলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের থেকে সেই সুবিধা পাওয়া যায়নি।

দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো বর্তমানে ব্যবহার উপযোগী। বাকিগুলোর মধ্যে প্রায় ২৪ হাজার একেবারেই অকেজো। ৮৬ হাজার ইভিএম মেরামতযোগ্য।

প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৭০৯ কোটি টাকা ব্যয় হলেও ইভিএম সংরক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ওইসব ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইসির কর্মকর্তাদের। ইভিএম সংরক্ষণে বিএমটিএই-এর ওয়্যারহাউজ ব্যবহার বাবদ এরই মধ্যে ৬০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে ইসির। যেটা রাজস্ব খাত থেকেই সরকারকে মেটাতে হবে।

ইভিএম প্রকল্প পাসের পরপরই টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিজ্ঞপ্তিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যথার্থতা বিশ্লেষণ, কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও ভোটারদের প্রস্তুতি যাচাই না করেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইভিএম কেনার উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তড়িঘড়ি করে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত সম্ভব হবে কি না সেই সংশয়ও প্রকাশ করে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইভিএম প্রকল্প আমাদের সময় গ্রহণ করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এর কিছুই আমি বলতে পারব না। কত দামে ইভিএম কেনা হয়েছে এটা আজও আমি জানতে পারিনি। প্রকল্প কেনাকাটা সবই সচিবালয় থেকে হয়েছে। সিইসি ও সচিবের মাধ্যমেই ইসির সব কার্যক্রম পরিচালিত হতো বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, অডিট দপ্তর ১ হাজার ১৫ শতাংশ বেশি দামের যে অভিযোগ এনেছে এটা সত্য নয়। তারা ভারতের মূল্য ধরে অতিরিক্ত দামে কেনা হযেছে বলে দাবি করেছে। ইউরোপ বা অন্য দেশের তো আরো বেশি দাম। আমাদের ইভিএম অনেক উন্নতমানের।

অডিট বিভাগ যে দামের সঙ্গে তুলনা করেছে তার থেকে বেশি দামে নির্বাচন কমিশন বুয়েট থেকে আরো কয়েক বছর আগেই ইভিএম সংগ্রহ করেছিল। সেটার প্রযুক্তিও এতটা উন্নত ছিল না। প্রকৃত বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়ে সিএজির অডিটের জবাব দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

প্রকল্প গ্রহণের সময় ১০ বছরের ওয়ারেন্টি চুক্তি করার পরামর্শ দেওয়া হলেও এক বছরের ওয়ারেন্টি চুক্তি হয়েছে বলে স্বীকার করেন প্রকল্পের পিডি। দীর্ঘমেয়াদি ওয়ারেন্টি না থাকাসহ বর্তমান কমিশন ইভিএমে ভোট না করার সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে পুরো প্রকল্পের অর্থ এক ধরনের অপচয় হয়েছে বলে স্বীকার করেন সৈয়দ রাকিব। তবে তিনি বলেন, ইভিএম যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও এর ব্যবহার করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে তা দেশের জন্য লাভজনক হতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ইভিএমের দুর্নীতি বা অনিয়মের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। অনিয়মের বিষয়ে অডিট দপ্তরের কোনো প্রতিবেদন আমার দপ্তরে আসেনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনাদের গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি ২০১৮ সালের ভোটের অনিয়মের বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তারা চাইলে ইভিএম প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করতে পারে।

ইভিএম মেশিন নিম্নমানের, দুদকের টিম ইসিতে

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রোববার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করেছে। তাদের অভিযানে ইসির কেনা সেই ইভিএম মেশিনে ত্রুটি ধরা পড়েছে। ফলে সামনে যেখানে যেখানে ইভিএম সংরক্ষণ আছে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে জানিয়েছে।

দুদকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে ইসি দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কেনা হয়। এর এক লাখ ৫০০ মেশিন ব্যবহারের অনুপযোগী হিসেবে অভিযোগ করা হয় আমাদের কাছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।

মেশিনগুলোর কিছু র‌্যান্ডমলি যাচাই করে প্রতি তিনটি মেশিনের একটিকে ত্রুটিপূর্ণ পেয়েছি। কিছু মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি ও কিছু অচল পেয়েছি। নিম্নমানের মেশিন কেনার ক্ষেত্রে কিছু রেকর্ড সংরক্ষণ করেছি। বাকি রেকর্ডগুলোও সংরক্ষণ করব। সামনের দিনগুলোতে আরো অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সোর্স : আমার দেশ