দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার তুরস্ক থেকে ২০ লাখ গোলাবারুদ আমদানি করে। জুলাই থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হতে থাকায়, পুলিশ আন্দোলন দমন করতে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদের চাহিদাপত্র দেয়। সেই চাহিদা অনুযায়ী, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং এসব গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হয়।
জানা যায়, আমদানি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল তুরস্ক সফরে যায়। এই দলে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস ও পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী। ২০২৩ সালের ২৯শে আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে তাদের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ৫ই সেপ্টেম্বর তারা তুরস্কের সমরাস্ত্র কারখানায় গিয়ে এই গোলাবারুদের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেন।
পরীক্ষা শেষে তারা ছাড়পত্র দিলে, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ বাংলাদেশে আসে এবং তা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বিতরণ করা হয়। এরপর থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হতে থাকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমদানি করা এই অস্ত্র প্রথমবারের মতো ২৮শে অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে ব্যবহার করা হয়। সেদিন নয়াপল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলার মোড় ও মতিঝিল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, হ্যান্ড গ্রেনেড ও ভারী বল কার্তুজ বুলেটের হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী আহত হন।
দুপুরের আগেই পুলিশের মুহুর্মুহু গুলিতে বিএনপির মহাসমাবেশ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অলিগলিতে পুলিশের হামলায় অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। পুলিশের ওই সূত্র জানায়, এই হামলার জন্য আগেভাগেই বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ মজুত রাখা হয়েছিল এবং ২৮শে অক্টোবর তা প্রথমবার ব্যবহার করা হয়।
এই অস্ত্র শুধু ২৮শে অক্টোবরেই নয়, বরং নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চলা সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ ব্যাপকহারে এই গোলাবারুদ ব্যবহার করে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর এটিই পুলিশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানির চালান ছিল। অতীতে এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আমদানি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বলেন, “অস্ত্র আমদানি সাধারণত মজুতের ওপর নির্ভর করে। চাহিদা অনুযায়ী মজুত না থাকলেই তখন আমদানি করা হয়। আমাদের সময় এত গোলাবারুদ একসঙ্গে আমদানি হয়নি, কারণ তখন চাহিদাও কম ছিল।”
এই বিশাল অস্ত্র আমদানির উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা, যা ২৮শে অক্টোবরের হামলার মাধ্যমে প্রকাশ্য হয়ে ওঠে।