ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক নারীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভে তোলপাড় গোটা দেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় তুলেছেন বাংলাদেশিরা। হাসিনার পতন সইতে না পারা ভারতের এই নৃশংসতা যেন ইতিহাসের সকল অসভ্যতা, হিংস্রতা ও বর্বরতার রেকর্ড ভেঙেছে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতে সাধারণ বাংলাদেশিদের টার্গেটে পরিণত করা নিয়মিত ঘটনা। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিদের প্রতি ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির তৈরি করা ঘৃণা এখন আক্রোশে রূপান্তরিত হয়েছে। যদিও নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ দেশ হিসেবে দেখা হয় মোদির ভারতকে।
এসব আক্রোশে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ব্যাঙ্গালুরুতে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক নারীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা। এই ঘটনায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের কাছে অতিদ্রুত জবাবদিহিতা চাওয়ার দাবি উঠেছে বাংলাদেশের সকল মহল থেকে। পাশাপাশি ভারতে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেবাদাসী ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পুনর্বাসনে সব ধরনের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে ভুল পথে হাঁটছে ভারত। এর ধারাবাহিকতায় পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে গিয়ে সম্প্রতি সীমান্তে বিজিবি-জনতার শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে পিছপা হতে হয়েছে আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী দেশটিকে।
নেটিজেনরা বলছেন, কোনো ষড়যন্ত্রেই ঐক্যবদ্ধ দেশপ্রেমী বাংলাদেশিদের টলাতে না পেরে কাপুরুষের মতো অতিথি হিসেবে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের টার্গেটে পরিণত করছে ভারতীয়রা। হাসিনার পতনের পর দেশটিতে প্রায়ই বাংলাদেশি পর্যটকদের হয়রানি করা হচ্ছে। নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশি ট্যাগ দিয়ে নিরীহ-নিরপরাধ জনগণকে পাঠার বলি বানানো এখন ভারতের রাজনীতিতে স্বাভাবিক ঘটনা। দেশটিতে বাংলাদেশি হলেই বিপদে পড়ার জন্য তার আর কোনো অপরাধ করা লাগে না। প্রায়ই উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও হেয়প্রতিপন্য করে বক্তব্য দিচ্ছে। বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ওই ঘটনা এসবেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এদিকে, বাংলাদেশে ভারতীয় পর্যটকদের সাথে অতিথির মতো ব্যবহার করা হয়। এদেশে ভারতীয়দের হয়রানির শিকার হওয়ার কোনো নজির নেই। পুলিশের কাছে নেই কোনো রেকর্ড। কিন্তু ভারতে প্রায়ই বাংলাদেশিরা উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রোশের শিকার হচ্ছেন। হাসিনাকে পুনর্বাসনে ব্যর্থ হয়েই জাতিগত আক্রোশের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ চড়াও হচ্ছে। যদিও হাসিনামুক্ত বাংলাদেশের জনগণ কোনো ক্ষেত্রেই আর পাত্তা দিতে চায় না ভারতকে। পরোয়া করে না দিল্লির দাদাগিরি আর চোখ রাঙানীকে
সমালোচকরা বলছেন, নারী নির্যাতন ও ধষণে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত ধর্ষক ও জাতিগত উগ্রবাদীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতি মুহূর্তেই দেশটির রাস্তাঘাটে মা-বোনদের সম্ভ্রমহানীর ঘটনা ঘটে। এমনকি নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে নিজ ঘরেই ধর্ষণের শিকার হয় দেশটির নারীরা। বিদেশী নারী পর্যটক ধর্ষণেও রেকর্ড গড়েছে দেশটি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশি ওই নারী কালকেরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। সেখান থেকে তার কর্মস্থলটি কাছেই ছিল। গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ওই অ্যাপার্টমেন্টে কাজ শেষে বের হওয়ার পরই তিনি নিখোঁজ হন। পরে লেকের ধারে উপস্থিত হয়ে পুলিশ ওই নারীর মরদেহটি দেখতে পায় ও উদ্ধার করে। তার মাথা ও মুখে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামতও স্পষ্ট ছিল।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, তার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। এ ছাড়া তার ওপর কতটা যৌন পাশবিকতা চালানো হয়েছে, সেটি ফরেনসিক রিপোর্টের মাধ্যমে জানা যাবে বলে জানিয়েছে তারা।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ভারতে একজন বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিদের প্রতি ভারতে বিজেপির তৈরি করা ঘৃণা এখন আক্রোশে রূপান্তরিত হয়েছে।উগ্রবাদী কর্তৃক একজন বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সম্ভ্রমহানির চেষ্টা হিসেবেই আমি দেখছি।
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ফরেইন মিনিস্ট্রিকে অতিদ্রুত ভারতের কাছে জবাবদিহি চাইতে হবে। হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ প্রেশার ক্রিয়েট করতে হবে। পাশাপাশি ভারতে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে, ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এমন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এ সময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’,‘দালালি না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।