ঢাকাসোমবার, ৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চট্টগ্রাম বন্দরের রেকর্ড সংখ্যক হ্যান্ডলিং করে ইতিহাস সৃষ্টি

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জানুয়ারি ২, ২০২৫ ১:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে ২০২৪ সালের কার্যক্রম শেষে করে ২০২৫ সালের যাত্রা শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কনটেইনার ও কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করে ২০২৪ সালে নতুন এই রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।

 

দেশের প্রধানতম এই বন্দর সদ্য বিদায়ী বছর ২০২৪ সালে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। এর আগে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউস। অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩৪ টিইইউস কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

 

এছাড়া ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ১৪ মেট্রিক টন। যা ২০২৩ সালে ছিল ১২ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ২৯৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন কার্গো পণ্য বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মাধ্যমে এই বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১২ শতাংশ।

 

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরে গেল ২০২৪ সালে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বাড়লেও কমেছে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা। সদ্যবিদায়ী ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় ৩ হাজার ৮৬৭ টি। অথচ ২০২৩ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৪ হাজার ১০৩ টি। অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ২৩৬ টি জাহাজ কম হ্যান্ডলিং হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

 

বুধবার (১ জানুযারি) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন ইয়ার্ডের কার্যক্রম পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, ২০২৪ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ সংখ্যক কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এর পেছনে বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও বন্দরের সকল স্টেকহোল্ডারদের অবদান স্মরণীয়।

 

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন আর জাহাজ এসে দিনের পর দিন অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় না। সরাসরি এসেও জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে। এছাড়া রাজস্ব আয়েও চট্টগ্রাম বন্দর এগিয়ে রয়েছে। পাশাপাশি খরচ কমেছে চট্টগ্রাম বন্দরের। এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরে ১৪-১৫ বছর যাবত থাকা অতিদাহ্য সোডিয়াম নাইট্রো ক্লোরাইডবাহী ৪টি কনটেইনার গত ২৭ অক্টোবর নিলামের মাধ্যমে বিডারকে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৫২ টিইইউস কনটেইনারের পণ্য ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতিমধ্যে শুল্ক বিভাগ কর্তৃক (৬ অক্টোবর থেকে ২৩ ডিসেম্বর) ৫৯ টিইইউস কনটেইনারের পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের ২০২৪ সালের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে তা দৃশ্যমান। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কনটেইনার ও কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং তাই প্রমাণ করে। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়বে যদি বেশি পরিমাণ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।

 

২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৩ সালের তুলনায় ২৩৬ টি জাহাজ কম এসেছে। গেল বছরে জাহাজের ওয়েভার সনদ দিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল যার কারণে অনেক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরবিমুখ হয়েছিল। তাই সরকারকে বাণিজ্যের স্বার্থে দেশের স্বার্থে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজ করতে হবে। তাহলে আরো সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।

 

একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের (বাফা) সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন  বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে প্রায় ৩৫টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান কাজ করে। যারা চট্টগ্রাম বন্দরের স্টেকহোল্ডার। বন্দরের নানা উদ্যোগ ও স্টেকহোল্ডারদের আন্তরিকতায় আজকে চট্টগ্রাম বন্দরের এই অর্জন হয়েছে। ২০২৪ সালে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে গেছে দেশ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও ফেনীর বন্যার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরে কার্যক্রম চালু ছিল। যার কারণে এই অর্জন।

 

খায়রুল আলম সুজন আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ কমার পেছনে একটি কারণ রয়েছে। সেটি হলো আগের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে বড় বড় জাহাজ আসা। এর ফলে বড় জাহাজে বেশি সংখ্যক পণ্য আনা নেওয়া করা গেছে। এতে জাহাজের সংখ্যা কমলেও পণ্যের পরিমাণ কিন্তু বেড়েছে। এখন বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। তাই আরো জাহাজ আনার মতো ব্যবসায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা গেলে বন্দরের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি আরো বাড়বে।