ঢাকাশুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ব্যতিক্রমী খোশরোজ শরীফ পালন করলো শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪ ৭:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এই শহর, যেখানে ব্যস্ত রাস্তায় ক্লান্তি জমে থাকে, যেখানে রাতের নিস্তব্ধতা আকাশচুম্বী ভবনের ছায়ায় ঢাকা পড়ে, সেখানে হঠাৎ করেই আধ্যাত্মিকতার এক শীতল হাওয়া এসে আমাদের ছুঁয়ে দেয়। আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ১০ পৌষ, বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)-এর ৯৬তম খোশরোজ শরিফ সেই হাওয়ার মতো, যা শুধু ধর্মীয় সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ নয়, বরং ছড়িয়ে পড়ে মানবতার এক বৃহৎ ক্যানভাসে।

 

এই উদযাপনে তাসাউফের গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা যেমন “ইখলাস” (আন্তরিকতা), “ইহসান” (সুন্দরভাবে কাজ করা), এবং “তাওয়াক্কুল” (আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা) প্রকট হয়ে ওঠে। এসবের মিশ্রণে একদিকে যেমন আধ্যাত্মিকতার রূপ স্পষ্ট হয়, অন্যদিকে তা নগরজীবনের বাস্তবতায় এক নতুন ধারা তৈরি করে।

 

শহরের বাসিন্দারা এই আয়োজনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে খুঁজে পায় নিজেদের মাঝে মানবতার বীজ। এতিম ও দরিদ্রদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া যেন তাসাউফের “ইহসান” ধারণার এক বাস্তবায়ন।

 

চট্টগ্রামের অলিগলি থেকে শুরু করে শহরের কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত, এই খোশরোজ শরিফ যেন এক নতুন সংলাপ। এবার শাহানশাহ্ ট্রাস্টের উদ্যোগে চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার ৯৫০টিরও বেশি এতিমখানা, হেফজখানা এবং আশ্রমের ৫৫ হাজার নিবাসীর মাঝে একবেলা খাবার বিতরণের আয়োজন হয়েছে। ভাবুন তো, এই শহরের আলো-আঁধারির মাঝে কত মানুষের ক্ষুধা লুকিয়ে থাকে, কত অভাব গলির কোনে মুখ লুকায়। এই আয়োজন সেই ক্ষুধা মেটানোর ছোট্ট প্রয়াস, তবু এর তাৎপর্য বিশাল।

 

ডিসেম্বরের শহরে এটা যেন এক “কমিউনিটি প্রজেক্ট”। এখানে নেই কোনো স্পনসরশিপ ব্র্যান্ডিং, নেই বড়লোকি প্রভাবের চমক। এখানে আছে কেবল নিঃশব্দ ভালোবাসা, একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা। সুফিবাদ ঠিক এখানেই আমাদের ছুঁয়ে যায়—নীরব সহানুভূতির মাধ্যমে।

 

বলা যায়, এই উদ্যোগ “ইখলাস”-এর (আন্তরিকতার) বহিঃপ্রকাশ। এতিমের মুখে হাসি ফোটানো মানে তো আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্ককেই পবিত্র করা। আবার এটি “তাওয়াক্কুল”-এরও (আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা) প্রতীক। শহরের এক অংশ যেখানে বিলাসিতায় ডুবে থাকে, সেখানে আরেক অংশের এই অভাব মেটানোর জন্য মাইজভাণ্ডার দরবারের মতো এক আধ্যাত্মিক উদ্যোগই যথেষ্ট।

 

এই শহরের প্রেক্ষাপটে, আমরা যখন ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকি, অফিসের কাজ নিয়ে মাথা ঘামাই, বা রাতের ক্যাফেতে বসে কফির কাপে গল্প গড়ি, তখন কি একবার ভেবেছি আমাদের চারপাশের মানুষদের নিয়ে? মাইজভাণ্ডারী সুফি দর্শন ঠিক এই মুহূর্তেই আমাদের জাগিয়ে তোলে—জীবনের আসল অর্থ খুঁজতে। খোশরোজ শরিফ সেই অনুসন্ধানের এক অংশ।

 

শহরের আলো ঝলমলে জীবনের মাঝে আধ্যাত্মিকতার এই মানবিক উদযাপন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কেবল ইট-কাঠের এই শহরের বাসিন্দা নই; আমরা এক বৃহত্তর আত্মার অংশ, যা ভালোবাসায় গড়া। খোশরোজ শরিফ সেই ভালোবাসার, সহমর্মিতার এবং শহুরে আধ্যাত্মিকতার উদযাপন।