নগরীর পাঁচটি সড়কের দুই পাশের ফুটপাতও বিক্রি করে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বেচে দেওয়া ফুটপাতে গড়ে উঠেছে প্রায় তিনশ নানা পণ্যসামগ্রীর দোকান। ফলে সড়কে যানবাহনের সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন পথচারীরা। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি তারা নানা হয়রানির শিকার হন।
অথচ স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, নগরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য ফুটপাত সংরক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তারাই ফুটপাত বিক্রি করে দিয়ে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন বলে দাবি পরিকল্পনাবিদদের। তবে চসিক কর্মকর্তাদের দাবি, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশে ফুটপাতে দোকান নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন তারা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেও নগরের শেরশাহ রোডে ১৯টি দোকান বরাদ্দের প্রক্রিয়া সেরে গেছেন তিনি। চূড়ান্ত বরাদ্দের আগে সেখানে রাতারাতি নির্মাণ করা হয়েছে ২০টি দোকান।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত নিশ্চিতে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার শেরশাহ কলোনি রোড, টেক্সটাইল গেট, তারা গেট এলাকার ফুটপাতে গড়ে ওঠা দুই শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে চসিক। ২০২১ সালের শুরুতে মেয়রের দায়িত্ব নেন রেজাউল করিম চৌধুরী। ফুটপাত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে তাদের দোকান বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ফুটপাতে ফের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতি বর্গফুট ফুটপাতের জন্য তিন থেকে চার হাজার টাকা নেওয়া হয়। প্রতি বর্গফুট ফুটপাত মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১০ টাকা। প্রতিটি দোকান থেকে দেড় থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পেয়েছে চসিক।
সর্বশেষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের আগে নগরের শেরশাহ কলোনি রোডের শহীদ মিনারের দক্ষিণ পাশের সড়কের ফুটপাতে ১৯টি দোকান বরাদ্দ দিয়েছে চসিক। সরকার পতনের পর সেলামির টাকা জমা না দিয়েই সেখানে রাতারাতি ২০টি দোকান নির্মাণ করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর অবৈধভাবে নির্মাণ করা দোকানগুলো উচ্ছেদে গিয়ে বাধার মুখে ফিরে আসেন চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বর্তমানে নগরের শেরশাহ কলোনি রোডের দুই পাশে ফুটপাতে ১২০টি, তারা গেটের ফুটপাতে ৯০টি ও টেক্সটাইল গেটে ৬৬টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ফুটপাতে ফার্মেসি, মুদি দোকান, মোবাইল, কসমেটিকস, স্যালুন, চা দোকান, খাবার হোটেলসহ নানা পণ্যের দোকান গড়ে উঠেছে। কোনো কোনো দোকানের পণ্যসামগ্রীও সড়ক দখল করে আছে। পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে সড়কে যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছেন।
চসিকের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সাব্বির রাহ্মান সানি সমকালকে বলেন, ফুটপাতে দোকান বরাদ্দ দিতে কর্মকর্তাদের কোনো সম্মতি ছিল না। সাবেক মেয়রের অভিপ্রায়ে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে সর্বশেষ যেসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো চূড়ান্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফুটপাতে নির্মাণ করা দোকানগুলো নিয়ে করণীয় নির্ধারণে মেয়রকে অবহিত করা হবে। তিনি যেটা সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটি কার্যকর করা হবে।
ফুটপাতে দোকান প্রসঙ্গে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ফুটপাত নাগরিকের অধিকার। এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি নগরের সব সড়কে ফুটপাত সংযোজনের জন্য আইন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।