ঢাকাশুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শুভ জন্মদিন বীর চট্টলার প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরাম

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ডিসেম্বর ৬, ২০২৪ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের লাল মাটি, সেই মাটি যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সাহসী সন্তানের রক্ত ধারণ করেছে, আজও কাঁদে। এই মাটি সাক্ষী ২০২৪ সালের ১৬ জুলাইয়ের এক রক্তঝরা দিনের, যেদিন ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অকুতোভয় এক সৈনিকের নাম ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে গেল—শহীদ ওয়াসিম আকরাম।

ওয়াসিম ছিলেন চট্টগ্রামের মাটি থেকে উঠে আসা এক বিদ্রোহী চেতনার নাম। তাঁর শিরায় বইছিল সূর্যসেনের চেতনা, তাঁর অন্তরে ছিল মাস্টারদা সূর্যসেনের সেই আহ্বান: “নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো।” ওয়াসিমের শ্লোগানে প্রতিধ্বনিত হতো ক্ষুদিরামের হাসি, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার প্রতিরোধ।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে, যখন বাংলাদেশে জনগণের কণ্ঠরোধ করতে একনায়কতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ তাদের হিংস্র বাহিনীকে মাঠে নামায়, ওয়াসিম আকরাম তাঁর বুক পেতে দিয়েছিলেন। ছাত্রদের অধিকার, জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে, এবং গণতন্ত্রের পুনর্জন্মের জন্য তিনি দাঁড়িয়েছিলেন ষোলশহরের রক্তস্নাত মিছিলে।

১৬ জুলাই ২০২৪। ষোলশহরের আকাশ ছিল উত্তাল, বাতাস ছিল প্রতিরোধের বার্তা বহনকারী। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শাসকের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়ে জনগণের ওপর চড়াও হয়। কিন্তু ওয়াসিম ভয় পাননি। তাঁর হাতের পতাকাটি যেন চট্টগ্রামের মাটি থেকে উঠে আসা বিদ্রোহের আগুনে ঝলসে উঠেছিল।

সেদিন, মিছিলের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হন। তাঁর সাহস, নেতৃত্ব, এবং মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর শক্তি শাসকদের জন্য ছিল হুমকি। পরিকল্পিতভাবে তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এটি ছিল এক কাপুরুষোচিত হত্যা, যা ক্ষমতার লোভ আর ফ্যাসিস্ট শাসনের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।

ওয়াসিম আকরামের আত্মত্যাগ স্মরণ করিয়ে দেয় ইতিহাসের সেই সংগ্রামী দিনগুলোর কথা, যখন ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে সালাম-রফিকরা রক্ত দিয়েছিল। কিংবা ১৯৭১-এ স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ যেন সেই ইতিহাস ভুলে গেছে।

ওয়াসিমের মৃত্যু শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি ছিল এক প্রতীকী বার্তা—যে কেউ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, তাকেই স্তব্ধ করা হবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, রক্ত কখনো বৃথা যায় না। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, সূর্যসেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, কিংবা বিপ্লবী বাঘা যতীনের আত্মত্যাগ—সবই প্রমাণ করে, অত্যাচারীদের পতন অবশ্যম্ভাবী।

ওয়াসিম আকরামের হত্যার বিচার আজ চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের দাবি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুধু একটি শহীদের জন্য নয়, বরং গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার পক্ষে আমাদের সংগ্রামের প্রতীক।

ওয়াসিমের মৃত্যু আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। তাঁর রক্তে রাঙানো চট্টলার মাটি আজও বলছে: “ওয়াসিম, তোমার রক্ত বৃথা যেতে দেব না।”

তাঁর জন্মদিনে আমরা অঙ্গীকার করছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই থামবে না। ওয়াসিম আকরামের স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে, আমরা জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো। কারণ সত্যের জন্য লড়াই করাই আমাদের চট্টগ্রামের ঐতিহ্য।