ঢাকাশুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ধানমন্ডি লেকের বইগাছ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ডিসেম্বর ৬, ২০২৪ ১০:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ধানমণ্ডি লেকের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ল গাছে ঝুলছে কাঠের বাক্স। একটু কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেগুলো পাখির বাসা নয়, বরং বইয়ের ছোট্ট লাইব্রেরি। ভেতরে সাজানো আছে নানা ধরনের বই। ইচ্ছে করলেই হাতে নিয়ে পড়া যায়, তবে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই।

প্রথমেই মনে হলো, এমন দৃশ্য তো বিদেশি ভিডিওতে দেখা যায়। কিন্তু ধানমন্ডি লেকে এমন আয়োজন! উদ্যোগটির পেছনে রয়েছেন জাকিয়া রায়হানা রূপা, এক বইপ্রেমী, যিনি ছোট্ট একটি আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

একদিন জার্মানির একটি ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রূপা। সেখানে রাস্তার ধারে, বাস স্টেশনে এমনকি জঙ্গলে পর্যন্ত বুকসেলফ রাখা। মানুষ বই পড়ছেন, কেউ কেউ বই দানও করছেন। তার মনে হলো, এ দেশে এমন কিছু কেন হবে না? ভাবনা থেকে কাজ। ১৬ নভেম্বর, মাত্র একটি বুককেস নিয়ে শুরু করেন তিনি।

বুককেসের কাঠামোটি ছোট। প্রতিটি বাক্সে ৭–৮টি বই রাখা যায়। লেকের বিভিন্ন স্থানে এখন এমন ১০টি বুককেস রয়েছে। উদ্দেশ্য—মানুষের হাতের নাগালে বই পৌঁছে দেওয়া।

রূপার কথায়, ‘ছোট সেলফগুলো বসানো সহজ। মানুষ যেখানে বসে সময় কাটায়, সেখানেই হাত বাড়ালেই বই। বই পড়ার অভ্যাস গড়তে এটাই সেরা উপায়।’

লেকে প্রতিদিন হাঁটতে আসেন লামিয়া ইসলাম ছোঁয়া। এক বুককেস থেকে বই হাতে নিয়ে বললেন, ‘এটা আমাকে প্রতিদিন লেকে আসার নতুন কারণ দিয়েছে। বইয়ের এমন সহজলভ্যতা সত্যিই অসাধারণ।’

অন্যদিকে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ভদ্রলোক বললেন, ‘এমন উদ্যোগ যুগান্তকারী। ধানমন্ডি লেক এই বুককেসের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

প্রথম বুককেস আর বইগুলো রূপার ব্যক্তিগত খরচে কেনা। কিন্তু এরপর থেকে বই ও বুককেস দানের স্রোত শুরু হয়েছে। কেউ নানুর ১১৭টি বই দিয়েছেন, কেউ পাঠিয়েছেন কুরিয়ারে। ধীরে ধীরে উদ্যোগটি রূপ নিচ্ছে এক আন্দোলনে।

রূপার ইচ্ছা, দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন বুককেস ছড়িয়ে দিতে। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কাজ করতে হবে এমন নয়। যার যার এলাকায় এ উদ্যোগ শুরু করতে পারেন।’

গাছের ডালে ঝুলে থাকা এই বুককেসগুলো শুধু বই রাখার বাক্স নয়; এগুলো আমাদের পাঠাভ্যাসের নতুন দ্বার। এ যেন এক নীরব পাঠচক্র, যেখানে কোনো সদস্য নেই, অথচ সবাই সদস্য।

ধানমন্ডি লেকের বুককেসগুলো শুধু বই পড়ার আনন্দই দেয় না, বরং দেখিয়ে দেয় বই দিয়ে সমাজকে বদলে দেওয়া সম্ভব। আর সেই বদলের অগ্রদূত হয়ে থাকবেন জাকিয়া রায়হানা রূপা।