সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের অংশে পণ্যভর্তি প্রায় ৪ শতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথিত অভিযোগ তুলে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ‘বাংলাদেশ চলো’ কর্মসূচির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত তিন দিন ধরে এসব ট্রাক আটকে থাকার কারণে পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওই ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ভারত অংশের ব্যবসায়ীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে হিন্দু ঐক্যমঞ্চ’র নেতারা। এ কারণে দোটানায় রয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায়ীরা।
গত রবিবার সিলেটের বিয়ানীবাজারের শ্যাওলা স্থলবন্দরের ওপারে বড় আকারের মুভমেন্ট করে ভারতের আসাম রাজ্যের বরাকভ্যালির হিন্দু ঐক্যমঞ্চের নেতারা। এই মুভমেন্টের কারণে ওই বন্দরে ২ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে।
সোম ও মঙ্গলবার আরো শতাধিক ট্রাক পণ্য নিয়ে বন্দর এলাকায় আসে। তবে পণ্যসহ ট্রাক সীমান্তের ওপারে আটকা রয়েছে। ভারত অংশের সুতারকান্দি স্থলবন্দর দিয়ে যাতে কোনো ট্রাক না ঢুকতে পারে সে কারণে হিন্দু মঞ্চ’র নেতাদের নজরদারি রয়েছে। ফলে ওই বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির রয়েছে।
একইসঙ্গে বন্দরের এপাশে বাংলাদেশ অংশে আরো ৫০ থেকে ৬০টি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। এই ট্রাকগুলোও মালামাল নিয়ে ঢুকতে পারছে না। সমস্যাটা মূলত ভারত অংশের। হিন্দুমঞ্চ’র নেতাদের হুমকির কারণে এ বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শ্যাওলা বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
গত সোমবার সকাল থেকে কয়েক দফা মুভমেন্টের পর করিমগঞ্জের আরেক বর্ডার স্টিমার ঘাট দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক কমলাক্ষ চক্রবর্তীর আল্টিমেটামের কারণে করিমগঞ্জ স্টিমার ঘাটের আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এতে করে জকিগঞ্জ অংশেও পণ্যবাহী ২০-২৫টি ট্রাক আটকে আছে। সিলেটের এই দুটি স্থলবন্দর দিয়ে মূলত পাথর, কমলাসহ নানা ধরনের পণ্য আসে। বিশেষ করে পাথর আমদানি করা হয় বেশি। রাজনৈতিক মুভমেন্টের কারণে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা লোকসানে রয়েছেন।
সিলেট জেলা পাথর আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই তিন দিন আগে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। এ বন্ধ হওয়ার জন্য মুভমেন্টই দায়ী। ভারত অংশের ব্যবসায়ীরা সব কার্যক্রম শেষে আটকা পড়েছে ৪ শতাধিক ট্রাক। এ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও তারা ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু ভারতের ব্যবসায়ীরা সমস্যা সমাধানের কোনো সুখবর দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, এখন যেসব পণ্যবাহী ট্রাক আটকা আছে সেগুলোর মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা।
শেওলা স্থলবন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী কমর উদ্দিন জানিয়েছেন, শনিবার থেকে দুই দেশের ট্রাক আসা-যাওয়া বন্ধ রয়েছে। তবে সোমবার বাংলাদেশ থেকে প্রাণ আরএফএলের দুইটি ট্রাক পণ্য নিয়ে গেলেও ভারত থেকে কোনো ট্রাক আসেনি। মঙ্গলবার পোর্টের কার্যক্রম একেবারের বন্ধ রয়েছে।
তামাবিল স্থলবন্দর পাথর, কয়লা আমদানি বন্ধ: তামাবিল বন্দরেও পাথর ও কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। ব্যস্ততম এ স্থলবন্দরে পাথর, কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। আমদানি করে নিয়ে আসা পাথরবাহী ট্রাকে কাদামাটি, আবর্জনাসহ ওয়ে স্কেলে কড়াকড়িভাবে ওজন নির্ণয়ের কারণে ওজন জটিলতায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাথর-কয়লা আমদানি থেকে বিরত রয়েছেন। এমতাবস্থায় পাথর আমদানি চালিয়ে নিলে ব্যবসায়ীরা পাথরবাহী ট্রাক প্রতি ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সোমবার তামাবিল স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের ডাউকী বন্দর এলাকায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতারা বিক্ষোভ করেছেন। এই বিক্ষোভকে ঘিরে তামাবিল বন্দরেও উত্তাপ বিরাজ করছে। বিক্ষোভের কারণে নতুন করে বন্দর চালু করতে ভয় পাচ্ছেন ডাউকী এলাকার রপ্তানিকারকরা।
তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানিকারক মেসার্স মিসবাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিসবাহউল আম্বিয়া ও মেসার্স রেজা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস উদ্দিন লিপু জানান, ওজন জটিলতায় আমরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পাথর আমদানি করে যেখানে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ওপারে পাথর-কয়লাবাহী শত শত ট্রাক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। রপ্তানিকারকরা আমাদের কাছে এসব পণ্যবাহী ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।
তামাবিল স্থলবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান সমন্বয়ক হেনরী লামিন বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করে ব্যবসা করে আসছিল। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকারের পরবর্তী সরকার ব্যবস্থা আসার পর হঠাৎ করে তামাবিল স্থলবন্দরে পাথর ও কয়লাবাহী ট্রাকসমূহ পুরোপুরি ওজনের আওতায় আনা হয়েছে। এতে করে আমাদের আমদানিকারকরা প্রতিদিন বড় অঙ্কের লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন। কেননা পাথরবাহী ট্রাকের পাথরের সঙ্গে কাদা, পানি এমনকি উচ্ছিষ্ট আবর্জনাও চলে আসে। তবে সোমবারের বিক্ষোভের পর থেকে ওই বন্দর দিয়ে আসা অন্যান্য মালামাল আসাও বন্ধ রয়েছে।