দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ– ইসকনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ দাবি তুলে ধরেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “আমরা দেখেছি, এই বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে কাদের মন সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছিল। আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট দেখেছি, যখন এই বাংলাদেশে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ হওয়ার কথা ছিল, তখন কীভাবে আমাদের এই মাদ্রাসার ভাইয়েরা ওই মন্দিরে গিয়ে পাহারা দিয়েছে।
“কীভাবে ৫ অগাস্ট রাতে সারারাত ওই মন্দির পাহারা দিয়ে সকালে ফজরের নামাজ তার সামনে রাস্তায় পড়েছে। সেখানে এই সহানুভূতিকে কেউ যদি প্রশয় হিসেবে দেখে, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, নাগরিক কমিটি নয়, পুরো বাংলাদেশ একসাথে এই সকল উগ্রপন্থিদের প্রতিহত করবে।”
সারজিস বলেন, “স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইসকনের নামে যেসব উগ্রপন্থিরা বিগত ১৬ বছরে অসংখ্য অপকর্ম ঘটিয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এসকল অপকর্মকে মানুষের সামনে আসতে দেয়নি। তারা ইসকনের এসকল অপকর্মকে মদদ দিয়েছে, প্রশ্রয় দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে, লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু তাদের চরিত্র কী, তারা কীভাবে মানুষকে জবাই করে এই দৃশ্য আমরা গতকালকে দেখেছি।”
চট্টগ্রামে ইসকন পরিচালিত মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ, সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে মঙ্গলবার তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় চট্টগ্রামের হাকিম আদালত।
ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। বেলা সোয়া ১২ টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিক্ষোভের পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।
সে সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাংচুর করে। বিক্ষোকারীদের ছোড়া ঢিলে আদালত মসজিদ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার কাঁচ ভেঙে যায়।
এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ যেমন সকল ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল, একইভাবে সকল উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে তাদের রক্ত গরম হয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে যেতে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, তাদের প্রতিহত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সারজিস আলম বলেন, “সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে, তাদেরকে যদি গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া হয়, তাহলে পুরো বাংলাদেশে একসাথে ছাত্র-জনতা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে।
“যদি এই ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে এটি হবে সরকারের বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি ব্যর্থতা। যারা ইসকন নামে উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদী মনোভাব বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য তাদেরকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজার আগে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “হামলাকারী যেই হোক, দলমত নির্বিশেষে, যে দলেরই হোক, যে বর্ণের হোক- সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নেই, কোনো দল নেই। সন্ত্রাসীকে আমরা সন্ত্রাসী হিসেবে ট্রিট করব। যে দলের, যে ধর্মের, যে বর্ণের হোক, অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
“আর ধর্মকে ব্যবহার করে কোনো খুনি আসামি, দাগি সন্ত্রাসী কেউ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোনো অন্যায় কাজ করতে না পারে। আমরা এই শহরকে শান্ত চাই। আমরা চাই না, ওই কতিপয় সন্ত্রাসীর কারণে সাধারণ সনাতনী কিংবা অন্য মানুষ এখানে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হোক। সেটাও আমরা চাই না।”