চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়রের চেয়ারে বসেই শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিচ্ছন্নকর্মীদের অনিয়ম-গাফিলতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। এরপর থেকেই একেক সময় একেক ওয়ার্ড পরিদর্শনে গিয়ে হাজিরা নিচ্ছেন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ছুটে যান চসিকের ২১ নম্বর জামাল খান ওয়ার্ডে। যাওয়া মাত্রই হাজিরা নেন ওই ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ সময় একের পর এক নাম ধরে সামনে ডেকে নিয়ে উপস্থিত বাসিন্দাদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করেন তারা আসলেই কাজ করেন কি না! উপস্থিত বাসিন্দারাও যাদের মাঠে দেখেন না তাদের বিরুদ্ধে জানিয়েছেন মেয়রকে। একই সঙ্গে সাফাই গেয়েছেন যারা পরিশ্রম করে নগরকে পরিস্কার রাখছেন
জামালখান ওয়ার্ডে পরিদর্শনে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় বর্জ্য দেখতে পান মেয়র শাহাদাত হোসেন। পরে ওয়ার্ডের সুপারভাইজার আখতার হোসেনকে ওই জায়গার বর্জ্য পরিস্কার করতে দুই দিনের সময় দেন। আর দুই দিনের মধ্যে শেষ করতে না পারলে চাকরি চলে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন।
সুপারভাইজার আখতার হোসেনকে উদ্দেশ্য করে মেয়র বলেন, ‘আপনাকে দুদিনের সময় দিচ্ছি। দুদিনের মধ্যে পরিস্কার করতে হবে। আর না হয় আপনার চাকরি চলে যেতে পারে। আমি স্থায়ী-অস্থায়ী দেখবো না, আমার কাজ দরকার।’
পরিছন্নতা কর্মকর্তা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘কোন ধরনের ফাঁকিবাজি করার চেষ্টা করবেন না। যে কাজকে আপনারা আপনাদের রুজি-রোজগার হিসেবে নিয়েছেন; সেটাকে আপনারা হক-হালালভাবে করার চেষ্টা করবেন। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয় জনগণের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবেন। আমরা মনিটরিংয়ের মধ্যে আছি এবং সেটা সবসময় থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামকে আমরা একটি সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি। সেজন্য আপনার আমাকে রাস্তায় রাস্তায় দেখছেন। যারা ছিল তারা হয়তো রাস্তায় রাস্তায় আসতো না। কিন্তু আমি বাধ্য হয়েছি রাস্তায় আসতে। জনগণের খেদমত করতে এখানে এসেছি। আমি আগেও বলেছি আমি কোন জনগণের পিতা নয়; জনগণের সেবক হতে এসেছি। আমি নগর পিতা নয়; নগরের সেবক হয়ে কাজ করতে এসেছি।’
জনগণের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে কোন জনদুর্ভোগ দেখলে; সেটা রাস্তা হোক, ময়লা হোক, ডাস্টবিন হোক, মশা হোক বা অন্য কিছু হোক আপনার আমাকে জানাবেন। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।’
ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে কর্মচারীদের হাজিরা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘আমি দেখছি তারা ঠিক মতো আসছে কিনা। যদি কেউ না আসে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। হাজিরা মানে, আসার পথ, যদি না আসে তাহলে বুঝতে হবে তারা ফাঁকিবাজি করছে। আর তাদের বিরুদ্ধে জনগণ হয়তো অনেক অভিযোগ দিবে সেজন্য আমি জনসম্মুখে হাজিরা নিচ্ছি। জনসম্মুখে জনগণ যদি বলে তাকে দেখছে; তার মানে সে কাজ করছে। আর জনগণ যদি বলে তাকে দেখছে না তারমানে সে ফাঁকিবাজি করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৮-১০টি ওয়ার্ডে করা হয়েছে এবং পুরো ৪১টি ওয়ার্ডে এই হাজিরা নেওয়া হবে। রাতেও আমি পরিদর্শন করছি। তাই আমি বলতে চাই, যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় যেতে পারি, কাজে সবাই সাবধানে থাকবেন।’
ফগার মেশিনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র বলেন, ‘দেখে দেখে কোনো নির্দিষ্ট বাসায় দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকটা জনগণের বাসায় স্প্রে করতে হবে। কোন ধরনের বৈষম্য আমি চাই না। বৈষম্যের কথা জানতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় ফিঙ্গার দেওয়ার পরও দুই হাজার টাকা বেতন কেটে ফেলার কথাসহ নানা অসুবিধার কথা মেয়রকে জানান পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। একইসঙ্গে বেতন দেরিতে দেওয়ার বিষয়েও মেয়রকে অবহিত করেন তারা।