বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অধিকার রক্ষা পরিষদ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত “জনতার গণদাবি এবং করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় বঞ্চিতদের অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত বক্তারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।
সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সম্পদের অসম বণ্টন সমাজে চরম বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। এটি শুধুমাত্র ধনী ও গরিবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার জন্ম দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন, যাতে তারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে এবং সমাজের অবিচারের শেকড় উপড়ে ফেলতে পারে।”
সামাজিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক তাহুরিন সবুর বলেন, “সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন সকলের একত্রিত প্রচেষ্টা। শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধই পারে আমাদের সমাজকে বৈষম্যমুক্ত করতে। শিক্ষার্থীরা যদি ন্যায়বিচার ও সমঅধিকারের জন্যে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে, তাহলে তারা আগামী দিনের সমাজের চিত্র বদলাতে পারে।”
বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক জি এইচ হাবীব বলেন, “বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানুষের মনের পরিবর্তন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একে কেন্দ্র করে মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সবাইকে যুক্ত করতে হবে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য আমাদের এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যেখানে সব শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মানুষ মর্যাদা ও সমানাধিকারের সুযোগ পাবে।”
অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, যিনি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমতার উপর দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, বলেন, “এই সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য শুধু সম্পদ বৈষম্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি শিক্ষাব্যবস্থায় এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান। শিক্ষার্থীদের উচিত সমাজের এই বৈষম্য দূর করতে একত্রিত হয়ে কাজ করা। তাদের পদক্ষেপগুলোই আমাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।”
কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনির বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই ছাত্র আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই আন্দোলন কেবল শিক্ষার্থীদের জন্য নয়; এটি একটি সমাজ পরিবর্তনের পদক্ষেপ। এটি সমাজের সকল স্তরে বঞ্চিতদের অধিকার রক্ষায় আমাদের সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীরা যখন একসাথে বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন সমাজের সকল স্তরের মানুষও প্রভাবিত হয় এবং একসঙ্গে পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যায়।”
আলোচনা শেষে উপস্থিত ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অন্যান্য শ্রোতারাও বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন তাঁদের অভিজ্ঞতা ও মতামত ভাগ করে নেন এবং বৈষম্য দূরীকরণে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সভার মাধ্যমে আলোচকরা আগামী প্রজন্মের কাছে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি রাখার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীরা এই প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে তাঁদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করা হয়।