বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ পরিচিত, স্টেডিয়ামও তাই। এই দশরথ স্টেডিয়ামেই তো স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দশরথেই আবার নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। জানিয়ে দিল এই অঞ্চলে মেয়েদের ফুটবলে এখন বাংলাদেশেরই রাজত্ব।
স্বাগতিক দল ফাইনালে। তাই স্টেডিয়ামে তিল ধরা ঠাঁই ছিল না। সাড়ে ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক হাজির হয়েছিলেন গ্যালারিতে। কিন্তু গত এক দশকে বয়সভিত্তিক দলে টানা সাফল্যে এবার জাতীয় দলেও দেখাতে শুরু করলেন সাবিনা-সানজিদারা।
ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। নেপালী গোলকিপারের ভুলে দ্বিতীয় মিনিটেই সুযোগ এসেছিল তহুরার সামনে। তবে তহুরার শট ফিরে আসে সাইড পোস্টে লেগে। ১০ মিনিটে ভাগ্য পক্ষে পায় বাংলাদেশও। বাংলাদেশের ভুলে পাওয়া বল পেয়ে শট নেন আমিশা কার্কি, কিন্তু তা পোস্টে লাগে।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল বাংলাদেশ। আর প্রতিপক্ষের শক্তির কথা চিন্তা করে নেপাল গিয়েছে প্রতি–আক্রমণে। প্রতি–আক্রমণে বারবার সাবিত্রাকে বল পাঠিয়ে সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে নেপাল।
৩৫ মিনিটে নেপালের গোলকিপারের ভুলে সুযোগ পেয়েছিলেন মনিকা। কিন্তু গোলকিপার অনেকটা এগিয়ে আসার পরও খালি পোস্টে বল পাঠাতে পারেননি। তাঁর জোরালো শট বল নিয়ে যায় পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে। প্রথমার্ধে কোনো দলই গোল করতে পারেনি।
৫২ মিনিট নেপাল রক্ষণ বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে বাংলাদেশের মিডফিল্ডারের কাছে বল তুলে দেয়। বল চলে আসে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কাছে। সাবিনা বক্সের ভেতরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা তহুরাকে পাস দিতে গিয়েছিলেন।
সে বল ক্লিয়ার করেন নেপালের সবিতা রানার। কিন্তু বল চলে যায় মনিকার কাছে। গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা নেপালি ডিফেন্ডার ও আগুয়ান গোলকিপারকে পাত্তা না দিয়ে বল জালে পাঠান মনিকা।
গোল উদ্যাপন করেও সেরে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যেই গোল শোধ নেপালের। ৫৬ মিনিটে মাঝমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ পান প্রীতি রায়। এতটাই দুর্দান্ত এক থ্রু পাস দিলেন যে বাংলাদেশি তিন মিডফিল্ডার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছেন। স্ট্রাইকার সাবিত্রা ভান্ডারিকে পাস দিয়েছিলেন, কিন্তু সাবিত্রা মুভটা বুঝতে না পারায় বল তাঁর পেছন দিয়ে চলে যায়।
এদিকে সাবিত্রাকে মার্কিং করা মাসুরাও রংফুটেড হয়ে যান, আর এ সুযোগে তা৬র ব্লাইন্ড সাইড দিয়ে এসে বলের দখল নিয়ে নেন আমিশা কারকি। আফেইদা তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি, নিচু শট গোলকিপার রুপনার পাশ দিয়ে জালে চলে যায়।
৬৭ মিনিটে রিতুর পাস থেকে বক্সের অনেক বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন মারিয়া মান্ডা। একদম ক্রসবার ঘেঁষে বল জালে ঢুকতে যাচ্ছিল এমন সময় দুর্দান্তভাবে তা পাঞ্চ করেন নেপালের অধিনায়ক আনজিলা সুব্বা।
৮১ মিনিটে গোলটা এসেছে খুব আচমকা। থ্রো ইন পেয়েছিল বাংলাদেশ। সামসুন্নাহার সিনিয়র থ্রো করে বল দেন ঋতুপর্ণা চাকমার কাছে। বল নিয়ে এগিয়ে কর্নারের একটু সামনে থেকে ক্রস পাঠান ঋতুপর্ণা। কিন্তু বল বাংলাদেশি কোনো খেলোয়াড়ের কাছে না গিয়ে যায় গোলকিপারের কাছে।
বলকে ফলো করে কাছে পোস্টে চলে আসায় বল গোলকিপারের নাগালেরে বাইরে চলে যাচ্ছিল। পেছাতে পেছাতে পাঞ্চ করেছিলেন আঞ্জিলা, কিন্তু ব্যালান্স হারানোয় তাঁর পাঞ্চ উলটো বল জালে পাঠিয়ে দেয়।
নেপাল মরিয়া হয়ে সমতা ফেরানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ভালো সুযোগ বাংলাদেশই পাচ্ছিল। তবে ৯০ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে উঠে গিয়েছিলেন সাবিত্রা। তাঁর শট বাংলাদেশি ডিফেন্ডারের হাতে লাগলে জোর পেনাল্টির আবেদন ওঠে। কিন্তু রেফারি তাতে সাড়া দেননি।
নির্ধারিত সময়ের পর ৫ মিনিট যোগ করা হয়। কিন্তু নেপাল পারেনি বাংলাদেশের মেয়েদের আটকাতে।