রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল বলেন, ভোর সাড়ে চারটার দিকে ওয়ালাপালং পুলিশ ক্যাম্পের আওতাধীন বর্ধিত ক্যাম্প-২০ এর লাল পাহাড় সংলগ্ন এস-৪ ও বি-৭ ব্লক এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করে ওই ব্লকে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত আহমদ হোসেন ও তার পরিবারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। বুকে ও গলায় গুলি করলে ঘটনাস্থলে দুজন নিহত হন। পরে আহত অবস্থায় আহমদ হোসেনের মেয়ে আসমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলে পথিমধ্যে তিনিও মারা যান।
মো. ইকবাল জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে- নিহত রোহিঙ্গা সৈয়দুল আমিন আরসার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। এ কারণে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরগুলোতে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। কোনোভাবেই থামছে না এ সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড। চলতি বছরের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত আশ্রয় শিবিরগুলোতে অন্তত ৬৪টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় খুন হন ৭২ রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের জেরে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। আশ্রয় শিবিরে সক্রিয় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ মাদক পাচার, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।
রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘এআরএইচপিএস’র সভাপতি ডা. মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, আধিপত্য বিস্তারের জেরে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ক্যাম্পে বেশকিছু গ্রুপ মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এসবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘটিত হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের খুনের ঘটনা বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। চলমান অস্থিরতায় অনুপ্রবেশও বাড়ছে। এসব ঘটনার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে ২৫২জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। এর মধ্যে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে সক্রিয় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওর মধ্যে ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তার, মতাদর্শগত বিরোধ, মাদক পাচার ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ক্যাম্পে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।