নগরের হালিশহর থানার নয়াবাজার মৌসুমি আবাসিক এলাকায় শাহজালাল রাবার অ্যান্ড সোল নামের টায়ারের কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর। নির্বাপণ কাজের সময় আহতও হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মী। আগুনে কারখানাটিসহ আশপাশের কয়েকটি দোকান এবং একটি ভবনও ভস্মীভূত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, টায়ার কারখানাটির অনুমোদন ছিল না। এর আগেও দুইবার সেখানে আগুন লেগেছিল।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৯টার দিকে ওই কারখানাটিতে আগুন লাগে। যা নিয়ন্ত্রণে আসে সকাল ১১টার দিকে। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে—তা এখনো জানা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগুন নির্বাপণের সময় হঠাৎ বিকট একটি শব্দ হয়। তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই দুই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আহত হন। এরপর তারা দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। আহত দুই কর্মীকে কোলে করে নিয়ে আসেন অন্য কর্মীরা। এরপর তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, টায়ার কারখানায় লাগা আগুন মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। কারখানা সংলগ্ন সম্প্রতি নির্মিত একটি ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। সেখানে কয়েকটি পরিবারের বসবাস ছিল। এছাড়া, আশপাশের কয়েকটি দোকানপাটের মালামালও আগুনে পুড়ে গেছে। কারখানা সংলগ্ন একটি মাদরাসায় আগুন ছড়ালেও শিক্ষার্থীদের নিরাপদে উদ্ধার করা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় এক দোকানি বলেন, ‘শুধু ফ্রিজটা আর ক্যাশটা বের করতে পারছি। বেশিরভাগ মালামালই পুড়ে গিয়েছে। টায়ার ফ্যাক্টরিটা অবৈধভাবে চলছিলো। কেমনে আগুন লেগেছে তাও জানি না।’
টায়ার ফ্যাক্টরিটির অনুমোদন ছিল না অভিযোগ করে আগুন নেভানোর কাজে থাকা এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘এখানে অবৈধ টায়ার ফ্যাক্টরি ছিল। হঠাৎ সকালে ধোঁয়া দেখে আমরা এসে দেখি আগুন লেগেছে। পরে ফায়ার সার্ভিস আসার পর তাদের সাথে আমরাও সাহায্য করেছি আগুন নেভাতে। ফ্যাক্টরির পাশেই একটি মাদরাসা আছে, সেটিতেও আগুন লেগে যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা দ্রুত মাদরাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
আগুন লাগা ভবন মালিক বলেন, এর আগেও দুইবার আগুন লেগেছিল। আমরা স্থানীয়রা ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম এটি সরাতে। কিন্তু বিগত ৮ থেকে ১০ বছর যাবৎ তারা এখানে আছে। তারা আমাদের কথা শুনেনি। এবার ভয়াবহ আগুন লেগেছে। আমার ভবনেও সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এখন আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে।
কান্নারত অবস্থায় ভবনের তৃতীয় তলার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার কাপড়চোপড় একটাও নাই। টাকাপয়সা যা ছিল সব পুড়ে গেছে। সব চলে গেছে আমার কিচ্ছু নাই। এক কাপড়ে বের হয়ে গেছি। আমি দোকানে ছিলাম। দৌঁড়ে এসেও কিছু বের করতে পারিনি।’
এক কিশোরী আহাজারি করে বলেন, ‘আমার ভাই প্যান্ট ছাড়া বের হয়ে গেছে। কোনোভাবে আগুনের মধ্য দিয়েই বের করছি। আমরাও আটকা পড়েছিলাম। একটা কিচ্ছু বের করতে পারি নাই। এর আগেও দুইবার আগুন লাগছে। এইসহ তিনবার। তাদেরকে বারবার বলার পরও ফ্যাক্টরিটি সরায়নি। এগুলার দায়ভার কে নিবে? আমার বইখাতা সব পুড়ে গেছে।
এদিকে, আগুন লাগার পরপর শাহজালাল রাবার অ্যান্ড সোল নামক ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
আগুন লাগার পরপরই চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অফিসের মবিলাইজিং অফিসার মো. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আজ সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ওই কারখানায় আগুন লাগার খবর পাই। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টা কাজ করে আনুমানিক ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।’
কারখানাটির অনুমোদন না থাকা এবং আগেও দুইবার আগুন লাগার বিষয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক এবং আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।