ঢাকামঙ্গলবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ‘বিজলি’ মিছিলে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে সমন্বয়কদের অসন্তোষ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
অক্টোবর ২১, ২০২৪ ১:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নগরে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ‘বিজলি’ মিছিলের পর আচমকা ‘উত্তাপ’ ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামজুড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়। অন্যথায় তিন থানার ওসির পদত্যাগ এমনকি খোদ পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। এর মধ্যেই নিয়মিত চালানো বিশেষ অভিযানে মিছিলকারীসহ নাশকতা মামলায় মোট ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে, গ্রেপ্তারের সংখ্যা নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’ নন সমন্বয়করা।

তাদের দাবি, এ সংখ্যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ হতে হবে। মিছিলকারীসহ আইনের আওতায় আনতে হবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। তাদের ‘মোদ্দা কথা’ ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনকারীদের ছাড় দেওয়া যাবে না।

পুলিশ বলছে, সরকার পতনের পর দায়ের হওয়া মামলাগুলোর আসামি ধরতে প্রতিদিনই বিশেষ অভিযান চলছে। মিছিলকারী, ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণকারী, সরকার পতন পরবর্তী মামলার আসামি এবং নাশকতা মামলার আসামিদের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে নিরীহ কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন, পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই তারা কাজ করছেন।

সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার থেকে রবিবার রাত ১০টা পর্যন্ত) চট্টগ্রামের ১৬ থানায় অভিযান চালিয়ে ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক এবং নাশকতার মামলায় মোট ৩৮ জন এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

যার মধ্যে কোতোয়ালী ও পাঁচলাইশ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৭ জনকে। তারা হলেন—রাকিবুল ইসলাম, ইমরান হায়দার, মহিউদ্দিন প্রকাশ মাঈনুদ্দিন, বেলাল হোসেন আজাদ, সাইমন, টুটুল এবং বাচ্চু মিয়া।

তাদের মধ্যে জামালখান এলাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে হওয়া মধ্যরাতের মিছিলে রাকিবুল ইসলাম, ইমরান হায়দার, মহিউদ্দিন এবং বাচ্চু মিয়া ছিলেন বলে জানা গেছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ রবিবার রাতে বলেন, ‘সরকার পতন পরবর্তীতে হওয়া মামলার আসামি এবং এর আগে ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চলছে। সেই অভিযানের প্রেক্ষিত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান আছে।’

তবে গ্রেপ্তারের সংখ্যা নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’ নন সিএমপিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।

সিএমপি কমিশনারের বরাতে ৩৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘প্রশাসন ব্যর্থ।’

রবিবার রাতে তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের জায়গা থেকে বলেছি, কালকের (সোমবার) মধ্যে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার চাই। আর এই গ্রেপ্তার সংখ্যা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। কারণ শত শত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছে।’

প্রশাসন ব্যর্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই ব্যথিত যে এখন পর্যন্ত প্রশাসন সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। প্রশাসন তাদের কাজে ব্যর্থ৷ আমরা আগামীকাল (সোমবার) পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।’

এদিকে আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘সমন্বয়করা তাদের বক্তব্য দিতেই পারেন। আমরা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই আসামিদের গ্রেপ্তার করছি। আর এক্ষেত্রে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আর গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মিছিলকারী, ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের মামলার আসামি এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী হওয়া মামলার আসামিরাও রয়েছে। যেকোনো জিনিস আইনের মাধ্যমেই করতে হবে। যারা এসব ঘটনায় জড়িত শুধু তাদেরকেই আইনের আওতায় আনছি। সাধারণ একটি মানুষও যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’

এর আগে, ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে নগরের জামালখান এলাকায় শেখ হাসিনার সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিজলী গতিতে শেষ করে মিছিলকারীরা অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তিনটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ২০-৫০ জন তরুণ জামালখান এলাকায় কয়েক মিনিটের মিছিল করে সটকে পড়েন। মিছিলের অগ্রভাগে মোটরসাইকেল যোগে কয়েকজন ছিলেন। যাদের সবার মুখ মাস্কে ঢাকা।

মিছিলটি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে শুরু করা হয় এবং ‘শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়। এরপর দ্রুত তারা ওই স্থান ত্যাগ করেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মিছিলের খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গেই কোতোয়ালী থানা পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু তারা পৌঁছার আগেই মিছিলকারীরা গা ঢাকা দেন।

ছাত্রলীগের মিছিলের পরপরই এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ পরদিন বিকেলে জামালখানে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন। বিকেল ৩টায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী সেই বিক্ষোভে অংশ নেন। সেখানে তারা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। এরপর বিকেল ৪টার দিকে তারা মিছিল সহকারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কার্যালয়ের প্রবেশমুখ  ‘ঘেরাও’ করেন।

সেখানে দেওয়া বক্তব্যে রাসেল আহমেদ প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগ-যুবলীগের খুনি-সন্ত্রাসীদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। জামালখানে খুনি শেখ হাসিনার পক্ষে যারা স্লোগান দিয়েছে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রশাসন আইনের আওতায় আনতে না পারে তাহলে চকবাজার, কোতোয়ালী ও পাঁচলাইশ থানার ওসিকে পদত্যাগ করতে হবে। একইসাথে সিএমপি কমিশনারকেও প্রত্যাহার করতে হবে। যদি না হয় আমরা আগামীকাল (রবিবার) থেকে কঠোর কর্মসূচি দেব।’