জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের গণহত্যার গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই গন্ধ নির্মূল করতে আজ (রবিবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সাহসিকতার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এরা তরুণ যারা আজকের সামাজিক রাজনীতির মঞ্চে এমন একটি নাটকীয়তা তৈরি করেছেন, যা শেখ হাসিনার সরকারের পতনকে অমলিন করে তুলেছে। পরীক্ষার হলের পরিবর্তে প্রতিবাদ মঞ্চে তাদের সাহসিকতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
জুলাই মাসের আন্দোলনে সরকারী বাহিনীর সহিংসতার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ গড়ে উঠেছিল, তারই নতুন রূপ দেখা গেল। ছাত্ররা শিক্ষকদের সমর্থন নিয়ে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পুরো হল থেকে বের হয়ে আসেন।
সঠিক নেতৃত্বহীন ছাত্ররাজনীতির এই যুগে, যখন সব তরুণ সরকারের ছত্রছায়ায় নিজেদের ‘গণতন্ত্রের রক্ষক’ বলে দাবি করতে আগ্রহী, তখন বাংলা বিভাগের ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেন—যদি এক সহপাঠী এমন গণহত্যার সমর্থক হয়, তাহলে তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হবে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জনাব মুনির উদ্দিন আহমেদ এর ভাষ্যে, ““আমরা আর ভয় পাবো না। আজকের এই সাহসিকতা আমাদের পথ দেখাবে, ভবিষ্যতের জন্য। গণতন্ত্রের পথে আমাদের লড়াই চলবে।”
শিক্ষকদের পরামর্শ উপেক্ষা করে, তারা একজোট হয়ে পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। এটা আসলে একটি সাহসি পদক্ষেপ, যা মিষ্টি ভাষী যেকোনো কারো ঘুম হারাম করে দিতে পারে।
অথচ, যখন এক ছাত্রীর মুখে আসে, “আমি তো কোন ক্রাইম করিনি!”—তখন মনে হয়, রাজনীতির অঙ্গনে আসলে ক্রাইম কী, সেটাই তারা বুঝতে পারেনি। এই ছাত্রীরা আন্দোলনে আহত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াই তাদের ‘ক্রাইম’। কীভাবে তারা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে, তা সরকার পক্ষের কাছে অদ্ভুত। প্রতিশোধ নেওয়ার এই পরিবেশে, সরকারও শিখে নিচ্ছে—ছাত্রদের সামনে এসে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেওয়ার সাহস থাকা প্রয়োজন।
বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম পরীক্ষাটি স্থগিত করে নতুন তারিখের ঘোষণা দেন। এদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু এরা যেন জানেন না—ছাত্ররা মুখের ওপর ক্ষমতার চেহারা ভেঙে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আসলে সরকারের পতনেরই এক সংকেত, যা তাদের সাহসিকতার ফলস্বরূপ। যখন দেশের গণতন্ত্র নড়ে চড়ে উঠে, তখন ছাত্রদের এ ধরনের সাহসিকতা সত্যিই আলোর রেখা।
আসুন, আমরা সবাই হাত বাড়াই এবং ছাত্রদের এই সাহসীকতার প্রতি সম্মান জানাই। বাংলাদেশের আগামী দিনের জন্য তাদের সাহস অমূল্য। এমনই সাহসের একটি ফসল হয়েছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন, এবং আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ একটি নতুন উজ্জ্বল অধ্যায়ে প্রবাহিত হওয়ার সাহস পেয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রদের সাহসী এই পদক্ষেপ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা যেকোনো ফ্যাসিবাদী কালো হাতের বিরুদ্ধে ছাত্রদের শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান ও আগামী পদক্ষেপ কী হবে, সেটি এখন দেখার বিষয়। শিক্ষার্থীরা যে এভাবে প্রতিবাদে সাড়া দিচ্ছেন, তা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।