সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ‘স্পিচ অফেন্স’ (মুক্তমত প্রকাশ) সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব মামলায় কেউ গ্রেফতার থাকলে তিনিও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি পাবেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। তাঁদের মতে, সাইবার নিরাপত্তার জন্য আইন করা হলেও ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক ভিন্ন মত দমনে। আইনটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলেও মনে করেন তাঁরা।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন। চাপের মুখে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এটিই হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সাইবার নিরাপত্তা আইন। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৮টি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইনের নাম বদল করা হলেও ব্যবহার করা হয়েছে একইভাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘বিগত সরকারের পুরো সময়টাতে দেখবে যে, রাস্তায় মানুষের আন্দোলন, রাস্তায় মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা—এই ধরনের বিষয়গুলো হারিয়ে গিয়েছিল। আল্টিমেটলি মাধ্যম ছিলোই শুধু অনলাইন। অনলাইনেও যাতে কোনো প্রতিবাদকে রুদ্ধ করার জন্যই এই আইনগুলো করা হয়েছে।’
দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের আইনে যে কাউকে যেকোনো সময় গ্রেফতার করতে পারে। আপনি কথা বলেছেন, পছন্দ হয়নি, আপনাকে চাইলেই গ্রেফতার করতে পারে। এসব আইন থাকলে মানুষ সহজে কথা বলতে পারে না। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকে না।’
বর্তমানে স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মোট ১ হাজার ৩৪০টি মামলা চলমান। যার মধ্যে ৪৬১টি মামলা তদন্তকারী সংস্থার কাছে ও ৮৭৯টি মামলা দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। ১ হাজার ৩৪০ মামলার মধ্যে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে ২৭৯টি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ৭৮৬টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৭৫টি।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘আইনটা তো আসলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন, যদি নিরাপত্তাই দিতে না পারে, সে যদি মেজর অনিরাপত্তা তৈরি করে ফেলে সবার জন্য, সমস্ত নাগরিকদের জন্য এই আইন সংশোধন করে আপনি কোনো কিছুর কূলকিনারা করতে পারবেন না। পরে কোনো রাজনৈতিক সরকার এই আইন সংশোধন বা বাতিল করবে কিনা সেটা তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।’
এই আইনটি প্রত্যাহার করা উচিত বলেও মনে করে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, যদি আইনের প্রয়োজন হয়, নতুন করে আইনটি তৈরি করা উচিত। তবে অবশ্যই প্রয়োজন আছে, হঠকারিতা কোনোভাবেই সমাজ মেনে নেয় না।আইন দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশে বাধা দেওয়া কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন বিশ্লেষকেরা।