ঢাকাশনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইরানের গোয়েন্দা প্রধানই ছিল মোসাদের চর : আহমেদিনেজাদ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
অক্টোবর ৩, ২০২৪ ৩:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গত মঙ্গলবার রাতে ইরান স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আঘাতটি হানে ইসরাইল ভূখণ্ডে। প্রায় ৪০০শ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে এ হামলা চালায় ইরান। এ হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠলো। কেননা, হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইল যদি পাল্টা প্রত্যাঘাত শুরু করে তাহলে যুদ্ধ যে আরও ভয়াবহ রূপ নেবে, তা কে না জানে। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কার্যক্রম ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা দানা বেঁধেছে। 

মোসাদের জাল যে পারস্য উপসাগরের তীরের শিয়া দেশটির ভিতরে কীভাবে ছড়িয়ে রয়েছে, নাসরুল্লার মৃত্যুর পর তা নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ। তার দাবি, ইসরাইলকে ঠেকাতে তেহরানের যে গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তার প্রধানই ইহুদিদের হয়ে চরবৃত্তি করেছেন।

সম্প্রতি তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দেন আহমেদিনেজাদ। সেখানেই মোসাদকে নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি।

তার দাবি, ২০২১ সালের মধ্যে এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে তেহরানের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ইসরাইলের হয়ে কাজ করছেন।

সাবেক এই ইরানি প্রেসিডেন্ট সিএনএনকে বলেছেন, ইহুদিরা আমাদের দেশের ভিতরে অনায়াসেই জটিল অভিযান চালাতে পারে। এর জন্য যে তথ্যের প্রয়োজন, সেটা পাওয়া ইসরাইলের কাছে একেবারেই কঠিন নয়। আশ্চর্যজনকভাবে সব জেনেও তেহরান এ ব্যাপারে নীরব। যা বিপদের কারণ হতে পারে।

আহমেদিনেজাদের দাবি, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইরানি গোয়েন্দা বাহিনীতে এমন ২০ জন এজেন্ট রয়েছেন, যারা ইহুদিদের হয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। এই ডাবল এজেন্টরাই ইসরাইলকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সংবেদনশীল তথ্য তুলে দিয়েছে। ২০১৮ সালে ওই নথি চুরির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তারা।

ইরান পরমাণু হাতিয়ার তৈরির উদ্যোগী হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাতে বাধা দিয়ে আসছে ইসরাইল। এই কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত একাধিক ইরানি গবেষকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। যার নেপথ্যে ইহুদি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে বলেই মনে করে বিশেষজ্ঞ মহল।

আহমেদিনেজাদ জানিয়েছেন, ইরানি পরমাণু গবেষকদের খুনে মোসাদকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছেন ইরানের ডাবল এজেন্টরা। সেপ্টেম্বরেই ইরানে গিয়ে আইআরজিসির পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন হিজ়বুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লা। ওই সময় তার গতিবিধির খবর ডাবল এজেন্টদের থেকে পেয়েছিল মোসাদ। সেই অনুযায়ী নাসরুল্লা লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ফিরতেই বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।

আহমেদিনেজাদের এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে ইরানের সাবেক গোয়েন্দামন্ত্রী আলি ইউনেসির গলায়। তার কথায়, ইসরাইলি গুপ্তচরেরা ইরান প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতায় শীর্ষে বসে রয়েছে। ফলে চক্রান্ত করতে সুবিধা হচ্ছে তাদের।

২০২১ সালের একটি সাক্ষাৎকারে ইউনেসি বলেন, গত ১০ বছরে ইরানের একাধিক সরকারি দপ্তরে মোসাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে দেশের শীর্ষ আধিকারিকদের প্রাণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

চলতি বছরের ৩১ জুলাই তেহরানে একটি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে। যার নেপথ্যে মোসাদের হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়। হানিয়ের মৃত্যুর দু’মাসের মধ্যেই নাসরুল্লাকে হত্যা করে ইসরাইল। এই অবস্থায় ইসরাইলি হামলার আশঙ্কা থাকায় দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয় তেহরান প্রশাসন।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে ২ অক্টোবর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করে নেতানিয়াহুর সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, মোট ১৮১টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে তেহরান। তবে তাতে একজন নাগরিকেরও মৃত্যু হয়নি।

তাদের দাবি, ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট হামলা থেকে বাঁচতে ইসরাইল জুড়ে রয়েছে শত শত ব্যাংকার। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইহুদি দেশটির আকাশসীমা লঙ্ঘন করতেই নাগরিকদের সেই সব আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। যার জেরে প্রাণহানি ঠেকানো গিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন। তবে এই হামলায় বেশ কয়েক জন ইসরাইলি আহত হওয়ার খবর এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের অবশ্য দাবি, হিজ়বুল্লাহ প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লার হত্যার বদলা নিতেই ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের ওপর হামলা চালিয়েছে ইরান।

ইসরাইল সরকারের দাবি, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় ১০ লাখ নাগরিককে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাদের সেখান থেকে বার করে আনা হয়। ওই ঘটনার পর পারস্য উপসাগরের শিয়া দেশটিকে খোলাখুলি হুমকি দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

হুঁশিয়ারির সুরে ইসরাইল বলেছে, ইরান বড় ভুল করে ফেলেছে। এর ফল তাদের ভুগতেই হবে। তবে কীভাবে ইসরাইল প্রত্যাঘাত হানবে তা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফের কাছে রয়েছে আমেরিকার তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। যা দিয়ে তারা ইরানের খনিজ তেলের ঘাঁটি উড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞেরা। কেউ কেউ আবার তেহরানের হাতে থাকা রাশিয়ার এস-৩০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংসের ব্যাপারে বাজি ধরেছেন। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইউনিটকে কয়েক মাস আগেও একবার উড়িয়েছে আইডিএফ।

এর মধ্যেই আবার সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেফটালি বেনেট ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির যাবতীয় গবেষণা ও প্রস্তুতিকে পুরোপুরি নষ্ট করার পক্ষে কথা বলছেন। বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, ইহুদিদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পাল্টা হামলা করবে ইহুদি সেনারা। যা সামলানোর ক্ষমতা নেই ইরানের।