চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার ফয়’স লেকে কনকর্ড গ্রুপের বিনোদনকেন্দ্র সী-ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান, এমডিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় রাইড দুর্ঘটনায় এক শিশুর অঙ্গহানির পর ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো তার পরিবারকে প্রাণনাশ ও গুমের হুমকির অভিযোগ আনা হয়।
সোমবার ৩০ (সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ওই শিশুর মা সখিনা বেগম।
মামলার আসামিরা হলেন, ঢাকার গুলশান থানার কনকর্ড সেন্টারের ফয়’স লেক কনকর্ড, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এস.এম কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার কামাল, মোহাম্মদ সাজ্জাদ এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাদীর শিশুপুত্র সাজ্জাদ হোসেন জয়, ভাতিজা মিয়াদ এবং বোনের ছেলে জিবরান বিনোদনের জন্য কনকর্ড সী ওয়ার্ল্ডে যায়। বাদীর ছেলে জয় স্লাইডিং রাইডে উঠে নিচে নামার সময় স্লাইডারের মাঝামাঝি ভাঙা ধারালো অংশে ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল কেটে গিয়ে ডান হাত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সেই বুড়ো আঙ্গুল স্লাইডারের ভাঙা অংশের সাথে ঝুলে থাকে। তখন জয় চিৎকার ও কান্নাকাটি শুনে সী-ওয়ার্ল্ডের দায়িত্বরত ৪ ও ৫ নম্বর আসামি উপস্থিত হয়। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজ খরচে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললেও কালক্ষেপণ করতে থাকে।
পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিকটস্থ আল আমিন হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক যত দ্রুত সম্ভব বিচ্ছিন্ন হওয়া আঙুল জোড়া লাগাতে আঙুলের অংশ উদ্ধার করতে বলে। বাদীসহ আরও দুইজন আঙুল উদ্ধারে সী-ওয়ার্ল্ডে গেলে সেখানকার কয়েকজন জানায় ,তাদের সাথে ঢাকায় অবস্থানরত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং এমডির সাথে কথা হয়েছে। তারা নির্দেশ দিয়েছেন আঙুল ফেরত না দিতে এবং বিষয়টি গোপন রাখতে। বিনিময়ে তারা ওই শিশুর সমস্ত চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে। এছাড়া ওই শিশুকে কনকর্ড গ্রুপে চাকরি দেওয়া হবে।
বাদী তার শিশুপুত্রের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গেলে দেখতে পান অঙ্গহানির চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তাছাড়া কৃত্রিম আঙুল লাগানোর জন্যও ভারত যেতেও হতে পারে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ সকালে কনকর্ড সী-সী-ওয়ার্ল্ডে চিকিৎসা ব্যয়ে সহায়তা চাইলে বাদীকে আসামিরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং খরচ দিবেনা বলে জানান। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাকর্মীর সাথে তাদের ওঠাবসা আছে বলে জানান। মামলা করলে প্রাণে মারার ও গুম করার হুমকি দেন। পরে ভয়ে বাদী তখন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এদিকে, সরকার পতনের পর ক্ষতিপূরণ দাবি করে বাদী চলতি বছরের ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। কিন্তু আসামিরা সাড়া দেননি।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী এডভোকেট সুলতান ওহিদ। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে ফয়েজলেক কনকর্ড সী-ওয়ার্ল্ডে রাইডে চড়তে গিয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এক শিশু তার আঙুল হারায়। পরে কর্তৃপক্ষ ওই শিশুর চিকিৎসাব্যয় দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে উল্টো বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়, চেয়ারম্যান, এমডিসহ মোট পাঁচ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।’
আদালত মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডিকে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।’-বলেন আইনজীবী ওহিদ।