মিয়ানমারের রাখাইনে গত এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আবার বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপল কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ। রাখাইনের মংডু টাউনশিপের আশপাশের গ্রাম থেকে মধ্যরাতে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান টেকনাফের বাসিন্দারা।
আজ (২৬ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর আগে রাত দেড়টায় থেকে ভোররাত চারটা পর্যন্ত থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নাফ নদীর তীরে টেকনাফ পৌরসভা, সদর, সাবরাং এলাকার বাসিন্দারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়নি। আজ মধ্যরাতে হঠাৎ বিকট শব্দে বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
সাবরাং ইউনিয়নের আছারবনিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দারা জানান, কয়েকদিন ধরে বিকট কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে রাত দেড়টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে মংডু টাউনশিপ থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।
মাঝরাতে আকাশে যুদ্ধ বিমানের চক্করের পাশাপাশি বোমার শব্দে এ পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সাবরাং ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মনে হচ্ছে বোমাগুলো এসে পড়ছে বাড়িঘরের আঙ্গিনায়। এতে করে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষগুলো ভয়ের মধ্যে রয়েছে।
টেকনাফ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওযার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আরাফা বেগম বলেন, মাঝরাতে থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমারের মংডু টাউন টেকনাফ পৌরসভার পূর্ব পাশে হওয়ায় এখানকার মানুষগুলো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে মর্টার শেল, মিসাইল, শক্তিশালী গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের শব্দে এ পাড়ের বাড়িঘর-দালান কাঁপছে। ভয়ঙ্কর এ শব্দে ঘুমে থাকা শিশুরা কান্নাকাটি করে উঠে যাচ্ছেন।
বিস্ফোরণে এপারের নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, কায়ুকখালীয়পাড়া, পল্লানপাড়া, কুলালপাড়া, খানকার ডেইলসহ কয়েকটি গ্রাম কেঁপে ওঠে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফ সদর ও পাশের সাবরাং ইউনিয়নের বিপরীতে মংডু টাউনশিপ। মাঝখানে চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদ দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। টানা পাঁচ মাস মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে লড়াই-সংঘাত চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৫টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি।
তবে এই বিষয়ে এখনও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মধ্যরাতে বিকট শব্দে কেঁপে উঠল টেকনাফ সীমান্ত। রাখাইনে বিস্ফোরণের ঘটনায় টেকনাফ সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।