ভারতের ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই কথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেছেন, বিজেপি ঝাড়খণ্ডে সরকার গঠন করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করবে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঝাড়খণ্ডে বিজেপি আয়োজিত এক নির্বাচনী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
খবরে বলা হয়, অমিত শাহ এদিন ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনে সাঁওতাল পরগণার সাহিবগঞ্জে পরিবর্তন যাত্রার মধ্যদিয়ে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এর আগে ১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া সাঁওতাল নেতা সিধু ও কানুর জন্মস্থান ভোগনাদিহ সফর করেন অমিত শাহ। সেখানে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা বা জেএমএম (ঝাড়খন্ড রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল), রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও কংগ্রেস ভোটের জন্য ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ সহায়তা করছে।
অমিত শাহ আরও বলেন, ‘ভোটব্যাংক হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে জেএমএম, আরজেডি এবং কংগ্রেস অনুপ্রবেশ বন্ধ করছে না। যদি আপনারা ঝাড়খণ্ডের সরকার পরিবর্তন করেন তাহলে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ঝাড়খণ্ড থেকে একজন একজন করে সব রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে বের করে দেবে বিজেপি।’
তার ভাষায়, আমি আপনাদের সকলকে ঝাড়খন্ডে বিজেপি সরকার গঠনের জন্য আবেদন জানাতে চাই এবং আমরা প্রতিটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করব।
তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে পরিবর্তন করা বা জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনে বিজেপিকে আনা উদ্দেশ্য নয়। ভোটারদেরকে দুর্নীতিবাজ সরকারকে সরিয়ে দিতে হবে। এমন একটি সরকার আনতে হবে যারা দুর্নীতি বন্ধ করবে।
বিজেপির এ নেতা বলেন, যে সরকার অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে উপজাতি মেয়ে এবং তাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। চাকরির জন্য আমার উপজাতি ভাই ও বোনেরা দেশের বিভিন্ন অংশে যান। এর পরিবর্তে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে সরকার সাঁওতাল পরগণার জন্য কর্মসংস্থান নিয়ে আসবে। আমরা শুধু মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তন চাই না। আমরা চাই ঝাড়খন্ডকে পাল্টে দিতে।
রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে অমিত শাহ বলেন, উপজাতিদের জন্য ঝাড়খন্ডকে সৃষ্টি করেছেন বিজেপির সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী। কিন্তু হেমন্ত সোরেনের সরকার উপজাতিদের কল্যাণের পরিবর্তে অনুপ্রবেশকারীদের কল্যাণকেই বড় করে দেখছেন।
“পাকুর জেলায় ‘হিন্দু এবং উপজাতিরা ঝাড়খন্ড ছাড়’ স্লোগান দেয়া হচ্ছে। শুধু নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিই এই উপজাতিদের জন্য এই ভূমিকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের এই রাজ্যে উপজাতিদের তুলনায় অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
অমিত শাহ বলেন, সাঁওতাল পরগনার জনসংখ্যার শতকরা ৪৪ ভাগই ছিল উপজাতি। কিন্তু এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২৮ ভাগে। তিনি আরও বলেন, ৫ বছরের জন্য ঝাড়খন্ডে আপনাদের উচিত বিজেপির সরকার গঠন করা। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ‘সাঁওতাল পরগনায় যেসব বাংলাদেশির অনুপ্রবেশ হয়েছে তাদেরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবে আমাদের সরকার।’
ঝাড়খণ্ডে আগামী নভেম্বর মাসে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। তবে নির্বাচনের তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এখন রাজ্যটির ক্ষমতায়। কংগ্রেস ও আরজেডি জোট সরকারের প্রধান দুই অংশীদার দল।
নির্বাচন সামনে রেখে আগেভাগেই প্রচারণা শুরু করেছে বিজেপি। আর নির্বাচনী প্রচারণায় বরাবরের মতোই কথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’র ধুয়ো তুলছেন দলটির নেতারা। গত রোববার ঝাড়খন্ডের জামশেদপুর শহরে বিজেপির এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঝাড়খন্ডের জন্য বড় হুমকি।’
সূত্র: টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু ও হিন্দুস্তান টাইমস