বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়ন থেকে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী রেহাই পায়নি। সরকার পতনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৪২২ জনই বিএনপির নেতাকর্মী। সকল মত ও পথের ব্যক্তির পরিচয় যাই হোক না কেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। মামলা হয়েছে দেড় লাখ, আসামি ৬০ লাখ। নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের বাবাকে, সন্তান এমনকি স্ত্রীকেও ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।
আজ রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রতিবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বিএনপি। ৫ আগস্ট গণতন্ত্রের পথ সুগম হয়েছে। দেশের মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন হিসেবে রাজপথে নেমে এসেছে বিএনপি। আন্দোলনের কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য নয়; বরং দেশের মানুষের জন্য রাজপথে নেমেছে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল; যার প্রকাশ ছিল ১০ ডিসেম্বরের ১০ দফায়। শেষে ১ দফা আন্দোলন শুরু করে সেসময় বিএনপির সিনিয়র নেতাসহ ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের আটক করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দলীয় কার্যালয়। বিএনপির অবদানকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। ১৬ জুলাই আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষোভে ফুসে উঠে সারা দেশে। ১৯ তারিখ বন্ধ হয় বিএনপি কার্যালয়। গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি অসংখ্য নেতাকর্মীকে। বহুমাতৃক নিপীড়ন উপেক্ষা করে বিএনপি রাজপথে ছিল। সাভারের গানপাউডার দিয়ে যে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, তার মধ্যে বিএনপি নেতাও ছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা জিয়া পরিবারের ওপর অত্যাচার চালিয়ে, লাখ লাখ নেতাকর্মীদের ঘর ছাড়া করেছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ঢাকা শহরের হকার রিকশাচালক, সিকিউরিটি গার্ডসহ নিম্নশ্রেণির কাজ যারা করে, তাদের বেশির ভাগই বিএনপি নেতাকর্মী। বিএনপি নেতাকর্মীদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বর্বরতার কালো অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে। নেতাকর্মীদের ওপর যে নিপীড়ন তা বর্বরতার উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সরকারের যে নিপীড়ন তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমন অত্যাচার নিপীড়ন লাগাতার চালিয়ে গেছে। আজ যে বিজয়, এ বিজয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের আর্তনাদ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয় বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনে বিএনপির অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত ছিল তাদের আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার। রাষ্ট্র সংস্কার করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিএনপির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে গড়ে তুলতে হবে নিরাপদ ও মেধাভিত্তিক সমাজ।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন সকলের মতামত নিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন দেওয়া। আমরা বাধা দেখতে পাচ্ছি, ঐক্যের জন্য উপযোগী নয় এমন অনেক কথা বলছে। এই মুহূর্তে দরকার ঐক্য। চক্রান্ত চলছে। ধৈর্য ধরে সহনশীলতার সাথে অন্তর্বর্তী সরকার যে কাজ ধরছে তা দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ হবার সুযোগ নেই। বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা দল আর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করা দল।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।