উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম থেকে শহর। এর আগে কখনও খাগড়াছড়ি শহর না ডুবলেও বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে সেই রের্কডও ভেঙেছে। শহরের ভেতরে প্রবেশ করছে বন্যার পানি। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো জেলাবাসীর নাকাল অবস্থা, থমকে গেছে জীবনযাত্রা। বন্যার কারণে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া শহরের বাসা-বাড়িতেও ঢুকে গেছে। এছাড়া অনেক উপজেলাতেও বন্যার পানি ঢুকেছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার লাখো মানুষ।
বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে সদরের গঞ্জপাড়া, মেহেদীবাগ, মুসলিমপাড়া, কালাডেবাপাড়া, মেহেদীবাগ, আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর, বায়তুশরফসহ বেশ কয়েকটি সড়ক এখন পানির নিচে। জেলা সদরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় প্রায় অনেকে বন্ধ রেখেছেন প্রতিষ্ঠান। প্রায় প্রতিটি সড়কের পাশের পানি নিষ্কাশনের নালা-ড্রেন উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের ওপর দিয়ে। এতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে ময়লা পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে।
ভারী বর্ষণে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মাইনী নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যায় ঘর-বাড়ি, সড়ক, কৃষি জমি ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের বাসিন্দা কাদের গনি বলেন, আমার জীবনে এতো পানি দেখিনি। জেলায় বন্যায় হলে শহরে সাধারণত পানি ওঠে না। এবার শহরের প্রধান সড়কগুলোতে পানি উঠেছে। টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টি আর নদীর পানি বেড়ে পৌরসভার গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল, শান্তিনগর, মুসলিম পাড়া পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেড কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃষ্টির কারণে মাইনী নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গ্রামের সঙ্গে এখন শহরগুলোও পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও ডুবতে শুরু হয়েছে। মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের নিচতলা ডুবে গেছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ২৯টি পরিবারকে বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় তুলে দেওয়া হয়েছে।’
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।